
সম্প্রতি পৃথিবীর প্রতিটি জীবের প্রতিটি কোষের গঠন, কাজ ও বিবর্তনের ইতিহাস অতি সূক্ষ্ম স্তরে একই বিশ্ব-মানচিত্রে আনার এক যুগান্তকারী উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এর নাম “বায়োডাইভারসিটি সেল অ্যাটলাস”(বি সি এ)। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পৃথিবীর সব জীবের, বিশেষত ইউক্যারিওটিক জীবের, অর্থাৎ যাদের কোষে নিউক্লিয়াস ও অন্যান্য অঙ্গাণু আছে, তাদের প্রতিটি কোষের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করা। এর ফলে বোঝা যাবে জীবনের বৈচিত্র্য কীভাবে গড়ে উঠেছে।
জীবনের মূল গঠনগত ও কার্যগত একক হলো কোষ। কিন্তু এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, কীভাবে একই ডি এন এ থেকে এত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি ও কোষ তৈরি হয়। বি সি এ প্রকল্প সেই রহস্যই উন্মোচনের চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যেন এক জীবন্ত মানচিত্র অঙ্কন করবেন। তাতে চিত্রিত হবে- বিভিন্ন প্রজাতির কোষের গঠন ও জিনের প্রকাশ কীভাবে ভিন্ন, কোন কোষের ধরন প্রাচীন এবং কোনগুলো নবীন, এবং কীভাবে কোষগুলো জীবজগতের বৈচিত্র্য তৈরি করে বিবর্তনের পথে নতুন রূপ নেয়।
এই প্রকল্পের নেতৃত্বে আছে যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট এবং স্পেনের সেন্টার ফর জিনোমিক রেগুলেশন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের শত শত জিনতত্ত্ব, জীববিজ্ঞান ও পরিবেশবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ।
তাঁরা বলছেন, এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জীববৈজ্ঞানিক মানচিত্র প্রকল্প।
গত দুই দশকে জিনোম সিকোয়েন্সিং জীববিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছে। মানবজিনোম থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রজাতির ডি এন এ মানচিত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু ডি এন এ শুধু সংকেত বার্তা বা কোড দেয়, কোষ সেই কোড কীভাবে ব্যবহার করে সে এখনো এক রহস্য।
ডি এন এ -এর কোড থেকে জীবনের বাস্তব রূপের পরিবর্তনের মধ্যেকার সেই সেতুবন্ধনটি তৈরি করবে বি সি এ প্রকল্প।
প্রথম ধাপে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির একক কোষে জিনের অভিব্যক্তি পরিমাপ করে এর জন্য একটি অভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করবেন। এর সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো ল্যাব থেকে পাওয়া তথ্য একইভাবে ব্যবহার করা যাবে। এর মাধ্যমে জানা যাবে— কোন কোষের ধরন সবচেয়ে পুরনো,নতুন কোষ কিভাবে গঠিত হয়, এবং বিভিন্ন প্রাণীর কোষ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই তথ্য ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়, বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণ, ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় নতুন পথ দেখাবে।
যেমন একসময় মানবজিনোম প্রকল্প জীববিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা করেছিল, ঠিক তেমনি বায়োডাইভারসিটি সেল অ্যাটলাস প্রকল্পটিও একটি কোষ থেকে বিশ্বব্যাপী সমগ্র জীবনের মানচিত্র তৈরি করে মানবজীবনের ভিত্তির রহস্য উন্মোচনকারী আরো একটি নতুন অধ্যায় হতে চলেছে।
সূত্র : The Biodiversity Cell Atlas: mapping the tree of life at cellular resolution by Amos Tanay, Jonathan Frazer, et.al;published in Nature journal,(24.09.2025).