জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপগ্রহ তথ্য

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপগ্রহ তথ্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখার একটি বাস্তব উপায় হতে পারে উপগ্রহ তথ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উপগ্রহ তথ্য আটলান্টিক মহাসাগরের ৩০% সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থলকে রক্ষা করতে সাহায্য করছে। একই সাথে জাহাজ চলাচল এবং মাছ ধরার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত কমানোর দিকেও নজর রাখছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা দ্বারা সমর্থিত প্লিমাথ মেরিন গবেষণাগার এবং সেন্ট্রো দি ইনভেস্টিগেসিওন মেরিনা ওয়াই অ্যালিমন্তারিয়ার বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষকরা আটলান্টিক মহাসাগরকে সামুদ্রিক দৃশ্য হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করেছেন। অঞ্চলগুলি তাদের অনন্য জৈবিক এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা স্বতন্ত্র। উপগ্রহ তথ্য ব্যবহার করে, বিশেষজ্ঞরা জীববৈচিত্র্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুরক্ষিত অঞ্চলগুলিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। “আমরা প্রতিটি সমুদ্র সৈকতের কেন্দ্রবিন্দু গণনা করেছি এবং তারপর সংরক্ষিত এলাকাগুলিকে নির্ধারণ করেছি। এক্ষেত্রে মাছ ধরা এবং জাহাজ চলাচলে কোনো বড় বাধা আসবে না”, জানিয়েছেন ব্যাঘাতহীন মাছ ধরার প্রযুক্তি-গবেষক ড: আসিয়ার আনা ব্রিতাত। গবেষকরা আটলান্টিক মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন অংশের জৈবিক কার্যকলাপ খুঁটিয়ে দেখার জন্য, ‘এনভিস্যাট’ এবং ‘কোপার্নিকাস সেন্টিনেল-৩,’ সেই সঙ্গে ‘নাসা’ এবং ‘নোওয়া ‘ উপগ্রহগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেন। দলটি খাদ্যশৃঙ্খলের সকল স্তরের জীবকেই পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফাইটোপ্ল্যাংটন থেকে শুরু করে বৃহদাকার তিমি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। ড: মার্টিনেজ ভিসেন্তে বলেন, “সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্যের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবুও, এই গবেষণায় বর্ণিত অভিনব প্রয়োগটি সারা বিশ্বের সামুদ্রিক নীতিকে সমর্থন জোগাতে পারবে”। বিশেষজ্ঞরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাহাজ চলাচল আর মাছ ধরার অঞ্চলগুলিকে নকশায়িত করার পাশাপাশি পরিযায়ী পাখি, কচ্ছপ, ডলফিন এবং শুশুক প্রভৃতি প্রজাতির প্রধান প্রধান আবাস্থলগুলিকেও নকশায়িত করতে পেরেছেন । ব্রিতাত বলেন,”মানুষের কার্যকলাপের ক্ষতিকর প্রভাবগুলির মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। স্টিমার, ইঞ্জিন, শিল্প-সরঞ্জামের ক্রমাগত গুঞ্জন জলের নিচের জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।” মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট শব্দদূষণ শিকার-শিকারি, প্রজনন ও স্বাভাবিক যোগাযোগের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি মাছদের মোট সংখ্যাকেও প্রভাবিত করতে পারে”। জাহাজের ধরণ, নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে কতগুলি জাহাজ যায় এবং কতটা শব্দ উৎপন্ন করে তা সবই বিবেচনায় রাখেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্লেষণে জানা যায়, সাবধানে নৌপথ পুন:নির্দেশিত করতে পারলে এইসব ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। গভীর সমুদ্রের ১.৪৫% অঞ্চল কোনো দেশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না; এগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে জীববৈচিত্র্যের জন্য সুরক্ষিত। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ ব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং শিল্প উন্নয়ন সামুদ্রিক জীবনের উপর ক্রমশ চাপ ফেলছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘ জীববৈচিত্র্য চুক্তি প্রণয়ন করে। এই চুক্তির লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রের ৩০% বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের আবাসস্থলগুলিকে রক্ষা করা। কিন্তু জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের অভাব এই অগ্রগতিকে ধীর করে দেয়। এই গবেষণা প্রকৃতি এবং প্রযুক্তি দুটির মধ্যে কোনো একটিকে বেছে না নিয়ে বস্তুত সর্বজীবের মঙ্গলার্থে কাজ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =