
এক ভয়ংকর সতর্কবার্তা উঠে এসেছে নাইজারের একটি হাসপাতাল থেকে। সেখানে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের শরীরে ধরা পড়েছে এমন সব ব্যাকটেরিয়া, যাদের ওপর সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। গবেষকরা এটিকে বলছেন “বিশ্বের জন্য এক আগাম সতর্কবার্তা”। খুব সহজেই এটি সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনও দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নতুন গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে আইনিওস অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রিসার্চ-এর সীমান্তহীন চিকিৎসক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে। ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে নাইজারে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত ১,৩৭১ জন শিশুর শরীর থেকে সংগৃহীত ৩,০০০-এ র বেশি মলদ্বার নিঃসরণ নমুনা পরীক্ষা করেন। ৭৬% শিশুর শরীরে পাওয়া গেছে এমন ব্যাকটেরিয়া যাদের জিনে ESBL নামক একটি বিশেষ উৎসেচক তৈরি হয়। এই জিন যেকোনো বিটা ল্যাকটাম গোষ্ঠীর অ্যান্টিবায়োটিককে ভেঙে ফেলতে পারে। যেমন, পেনিসিলিন বা সেফালোসপোরিন। আরও চমকে দেওয়া তথ্য, প্রতি চারজন শিশুর একজন কার্বাপেনেমেজ জিনযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার বাহক। এই জিনগুলো শক্তিশালী কার্বাপেনেম গ্রুপের ওষুধকেও ব্যর্থ করে দিতে সমর্থ। আরও উদ্বেগের বিষয় , গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশু ভর্তি হওয়ার সময় এসব প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বহন করছিল না, তাদের ৬৯% -ই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছে। অর্থাৎ হাসপাতালই হয়ে উঠছে সংক্রমণের ‘উৎপাদনকেন্দ্র’। গবেষণাপত্রের সহলেখক ড. ওয়েন বি স্পিলার বলেন, “দেশবিদেশ ভ্রমণ যত বাড়ছে, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার গতিও তত বাড়ছে। আজ নাইজারে যা ঘটছে, কাল যে তা লন্ডন বা কলকাতায় ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।” তিনি বলেন, “এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, নজরদারিতে ঢিলে দিলে অদৃশ্য জিনযুদ্ধে আমরা হেরে যাব।” গাজার মতো অঞ্চল যেখানে যুদ্ধ আর খাদ্য সংকট একসঙ্গে চলছে, সেখানে ইতিমধ্যেই শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে অপুষ্টি ও সংক্রমণে। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তন একসঙ্গে মিলে ‘বহু -ওষুধ – প্রতিরোধী জীবাণুর বিস্ফোরণ’-ঘটানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। প্রধান গবেষক ড. কির্সটি স্যান্ডস বলেন, “এই শিশুরা বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অংশ। আমরা দেখছি, তারা এমন ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে, যেগুলো জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও সাড়া দিচ্ছে না।” গবেষক সেলিন ল্যাঙ্গেনডর্ফ বলেন, “অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা হাসপাতালগুলোতে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া এক শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণেই শিশুদের মৃত্যু ঘটবে।” যুক্তরাজ্য সরকার জীবাণুদের এই প্রতিরোধকে একটি “প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনায় (২০২৪-২৯) নজরদারি, নতুন ওষুধ উদ্ভাবন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যে গরুর মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কমিয়েছি এবং নতুন ওষুধ তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রসংঘ মারফত প্রতিরোধ গড়ে তুলছি।”
সূত্র : Acquisition of Escherichia coli carrying extended-spectrum ß-lactamase and carbapenemase genes by hospitalised children with severe acute malnutrition in Niger by
Kirsty Sands, et.al ; Nature Communication (01 August, 2025).