জীবাণু বাঁচার জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করছে

জীবাণু বাঁচার জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ অক্টোবর, ২০২৪

প্রাচীন প্রবাদ বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। ঠিক তেমনই জীবাণুনাশকের মধ্যেই জীবাণুর বাস। মাইক্রোবায়োম জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় জীবাণুর এমন স্ট্রেন শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলো শহরের বসবাসের জন্য অভিযোজিত হয়েছে। চীনের জিয়ান জিয়াওটং-লিভারপুল ইউনিভার্সিটির (এক্সজেটিএলইউ) সহকারী অধ্যাপক ডঃ জিনঝাও টং বলেছেন, অনেক বাড়ি-ঘর ওয়ালা স্থানে জীবাণুর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও সম্পদ কম থাকে। কিন্তু মানুষের নির্মিত এই পরিবেশে অনন্য মাইক্রোবায়োম থাকে। পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত পণ্য এমন পরিবেশ তৈরি করে যাতে জীবাণুকে হয় সেই পরিবেশে মানিয়ে নিতে হবে বা নির্মূল হয়ে যেতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে জীবাণুরা পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়ায় আর বেঁচে থাকে।
গবেষকরা হংকং-এর সাবওয়ে, বাসস্থান, জনসাধারণের জন্য প্রদত্ত সুবিধার স্থান, জাহাজের জেটি, মানুষের ত্বক এই সব থেকে ৭৩৮ টা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারপরে তারা শটগান মেটাজেনমিক সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে জীবাণুর জিনোম বিশ্লেষণ করে, জীবাণু কীভাবে চ্যালেঞ্জিং শহুরে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করেন। গবেষকরা ত্বক এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশে আগে শনাক্ত করা হয়নি এরকম ৩৬৩টা মাইক্রোবিয়াল স্ট্রেন শনাক্ত করেন। এর মধ্যে ক্যান্ডিডেটাস ফাইলাম এরেমিওব্যাক্টেরোটা আগে শুধুমাত্র অ্যান্টার্কটিক মরুভূমিতে পাওয়া যেত। পরিচ্ছন্নতার পণ্যে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়াম আয়নকে এই ব্যাকটেরিয়া বিপাক করতে পারে। এদের এমন জিন রয়েছে যা সাধারণ জীবাণুনাশকে ব্যবহৃত অ্যালকোহল ভেঙে ফেলতে পারে।
জীবাণুগুলো সীমিত সংস্থান ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যগুলোর (জীবাণুনাশক এবং ধাতু) সাথে মানিয়ে নেয়। অ-প্রতিরোধী স্ট্রেনকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে নিজেদের বেঁচে থাকা এমনকি বিবর্তনও নিশ্চিত করে। তাদের রোগ সংক্রমণের ক্ষমতা থাকলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন তারা মাইক্রোক্ককাস লুটিয়াস-এর ১১ টা স্ট্রেন শনাক্ত করেছেন, যা সাধারণত অ-সংক্রামক কিন্তু যে ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। আবার প্যাটেসিব্যাক্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার ওপর পরজীবী হিসেবে বাস করে। এদের মানুষের ত্বকে পাওয়া গেলে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ক্যারোটিনয়েডস ও ইউবিকুইনোন জৈব সংশ্লেষণের জন্য জিন বর্তমান থাকছে। এই যৌগগুলো মানুষের পক্ষে খুব দরকারি, যা খাবারের মাধ্যমে মানুষ পায়। গবেষকরা মনে করছেন, ব্যাকটেরিয়া ও মানুষের মধ্যে মিথোজীবীতা দেখা যাচ্ছে। হাসপাতাল হল জীবাণুর আঁতুড়ঘর, বিশেষত ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট। গবেষকরা এখন এই সমস্ত ইউনিটে ব্যাপকভাবে জীবাণুনাশকের আওতায় আসা সংক্রামক জীবাণুর প্রতিরোধ ও বিবর্তন নিয়ে অধ্যয়ন করছে। এতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − one =