
এতদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, কোনো জৈব পদার্থই অতি প্রাচীন জীবাশ্মে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাচীন কোলাজেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে একটি ডাক-বিল্ড ডাইনোসরের জীবাশ্মে। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভ টেলর বলেন, “এই গবেষণা সন্দেহাতীতভাবে হদিশ দেয় যে কোলাজেনের মতো প্রোটিন-জৈবের অণুগুলিতে কিছু জীবাশ্ম উপস্থিত থাকতে পারে।”২০১৯ সালে
সাউথ ডাকোটার হেল ক্রিক ফরমেশন নামক খননস্থল থেকে এই জীবাশ্মটি পাওয়া যায়। এটি ছিল এডমন্টোসরাসের জীবাশ্ম। এটি শেষ যুগের নন-এভিয়ান ডাইনোসর প্রজাতির একটি। এই বিশাল সরীসৃপগুলি ছিল ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা, উদ্ভিদভোজী, শিংযুক্ত এবং ঠোঁটওয়ালা। প্রায় ৭৩ মিলিয়ন বছর আগে এরা টি-রেক্স এবং ট্রাইসেরাটপসের সঙ্গে সহাবস্থান করত। এর আগে, ২০০৭ সালে একটি টি. রেক্সের বাহুর হাড় এবং ২০০৯ সালে একটি হ্যাড্রোসরের পায়ের হাড়ের জীবাশ্মে সাধারণ প্রোটিন কোলাজেন পাওয়া গিয়েছিল। সেক্ষত্রে, অনেক গবেষকই বিতর্কে যুক্তি দেন, যে কোনো মূল প্রোটিন জীবাশ্মীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণের উৎস হিসাবে অনেক আগেই জীবাশ্মে প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গবেষকরা, তিনটি আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। যার মধ্যে একটি হল, ক্রস-পোলারাইজড লাইট মাইক্রোস্কোপি, যা স্পষ্টভাবে জীবাশ্মে থাকা হাইড্রক্সিপ্রোলিন শনাক্ত করে। এটি কোলাজেনের একটি মৌলিক উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই উপাদানটি খুবই কম পরিমাণে এবং ভাঙা অবস্থায় রয়েছে, যা প্রমাণ করে কোলাজেনটি সত্যিই প্রাচীন। গবেষকরা অবশ্য একটি আধুনিক টার্কি এবং বয়স্ক গরুর কৃত্রিম কোলাজেন নমুনাও তরল ক্রোমাটোগ্রাফি ট্যান্ডেম মাস স্পেক্ট্রোমেট্রি ব্যবহার করে এই কোলাজেনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। খুশির খবর, এডমন্টোসরাস নমুনার সাথে এর কোনো সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি। গবেষক টেলর পরামর্শ দেন, “একশো বছর ধরে সংগৃহীত জীবাশ্ম হাড়ের ক্রস-পোলারাইজড লাইট মাইক্রোস্কোপি চিত্রগুলি পুনরায় দেখা উচিত”।
এই আবিষ্কার, পুরনো জীবাশ্মের নমুনাগুলিকে নতুন করে পরীক্ষা করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। এর মাধ্যমে, ডাইনোসর প্রজাতিগুলি সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। কীভাবে এই প্রোটিনগুলি এত দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পেরেছে, তাও বোঝা যাবে।