জুমকলে আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া কম হয়

জুমকলে আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া কম হয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ নভেম্বর, ২০২৩

জুম কলে অনেকেই স্বচ্ছন্দ নন। ইমাজিং নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত নতুন গবেষণা জানাচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক মুখোমুখি কথোপকথনের মতো জুম কথোপকথনগুলিকে প্রক্রিয়া করতে পারে না। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণার ফলাফলগুলি তুলে ধরে যে আমরা কীভাবে অন্যদের সাথে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করি আর তার জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক নিউরোসায়েন্টিস্ট জয় হির্শ জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশে সামাজিক প্রতিক্রিয়া হয়, জুমে কথা বলার তুলনায় সেই অংশ সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় বেশি সক্রিয় থাকে। বর্তমান প্রযুক্তিতে মুখের অনলাইন উপস্থাপনা, মস্তিষ্কের সামাজিক নিউরাল সার্কিট্রিতে একই সুবিধা দেয় না।
গবেষকরা তুলনা করেছেন কিভাবে দুইজন মানুষ একে অপরের সাথে রিয়েল টাইমে মিথস্ক্রিয়া করেছেন। ২৮ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারী নেওয়া হয়েছিল, যাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা নেই এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ এবং জাতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা যখন একে অপরের সাথে কথা বলছিলেন তখন মস্তিষ্ক এবং চোখের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে গবেষকরা নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি (fNIRS), ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (EEG) এবং চোখের ট্র্যাকার ব্যবহার করেছিলেন।
গবেষকরা জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে ভিডিও চ্যাট করা জুম ব্যবহারকারীদের সাথে সরাসরি মুখোমুখি কথোপকথন তুলনা করেছেন। কথোপকথনের অংশীদাররা একই ছিলেন এবং কথোপকথনের সময় প্রতিটি জোড়া একই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। জুম মিথস্ক্রিয়াগুলির সাথে তুলনায় , মুখোমুখি আলোচনায় মস্তিষ্কের ডোরসাল-প্যারিটাল অঞ্চল নামক একটি জটিল এলাকায় সংকেত বৃদ্ধি হয়।
যখন লোকেরা একে অপরের সাথে মুখোমুখি কথা বলে, তখন মস্তিষ্কে থিটা দোলন দেখা যায় অর্থাৎ তাদের মুখ প্রক্রিয়াকরণ বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে সংবেদনশীল প্রক্রিয়াকরণ এবং স্থানিক উপলব্ধি অঞ্চলে ক্রিয়াকলাপ দেখা যায়, এবং চোখের মাধ্যমে যোগাযোগের সময় দীর্ঘ হয়। চোখের মণির মাপও কথা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে থাকে। সামনাসামনি কথোপকথনরত মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যানগুলি সিঙ্ক্রোনাইজড নিউরাল কার্যকলাপের উচ্চ স্তর প্রকাশ করেছে, যা গবেষকরা সামাজিক সংকেতের পারস্পরিক বিনিময় বৃদ্ধির চিহ্ন হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
আজকের উচ্চ রেজোলিউশন ক্যামেরার ওয়েবক্যামেও চোখের যোগাযোগ ঠিকমতো হয় না। ক্যামেরা চোখের দিকে ফোকাস করতে বাধা দেয়, আমরা যদি স্ক্রিনের দিই, তবে অপর প্রান্তের ব্যক্তির মনে হয় যেন আমরা তাদের দৃষ্টিসীমার নীচে তাকিয়ে আছি, আবার ক্যামেরার দিকে তাকালে আমরা স্ক্রিনে মন দিতে পারিনা।
মানুষ মূলত সামাজিক প্রাণী তাই সামাজিক মিথস্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ, গবেষকরা বলছেন, আমরা অন্যান্য মানুষের সাথে প্রতিদিনের মিথস্ক্রিয়ায় যে বিভিন্ন মৌখিক সংকেতগুলির মুখোমুখি হই তা প্রক্রিয়া করার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক অভিযোজিত।