জেনেটিক কীটনাশকের কুপ্রভাব মানুষের জিনে সবচেয়ে বেশি পড়বে

জেনেটিক কীটনাশকের কুপ্রভাব মানুষের জিনে সবচেয়ে বেশি পড়বে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ আগষ্ট, ২০২৪
জেনেটিক কীটনাশক

আমরা সবাই জানি কীটনাশক শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক, পরিবেশের পক্ষে বিষাক্ত। রাসায়নিক কীটনাশকের ফলে মাটি, জল বাতাস দূষিত হয়। জেনেটিক কীটনাশককে অপেক্ষাকৃত পরিবেশ বান্ধব বলে মনে করা হয়। জেনেটিক কীটনাশক ফসলের পোকামাকড়ের জিন পরিবর্তন করতে সক্ষম। সাধারণত পরীক্ষাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জিন এডিটিং করা হয়। ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, জেনেটিক কীটনাশকে উন্মুক্ত হলে টার্গেটেড পোকামাকড় ছাড়াও মানুষ, খামারের প্রাণী সকলেই ক্ষতির শিকার হতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, যেখানে স্প্রে করা হবে, জেনেটিক কীটনাশক সেই পরিবেশে থাকা মানুষ, প্রাণী এবং পোকামাকড়ের জিন পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে। এই কীটনাশকের সংস্পর্শে এলে, শ্বাস নিলে বা ইনজেশনের মাধ্যমেও এটা শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রভাব মানুষের ওপর পড়বে, যারা জৈবিক পরিণতি যথেষ্ট নেতিবাচক হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে জিনোমিক অঞ্চলের পরিবর্তনে বিভিন্ন ক্যান্সার, হরমোন বিপাকের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়, অপরিহার্য জৈব অণুর সংশ্লেষণে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর এর প্রভাব পড়ে।
ওয়েস্টার্ন কর্ন রুটওয়ার্ম, রেড ফ্লাওয়ার বিটল, স্ক্লেরোশিনিয়া স্ক্লেরোশিয়াম ছত্রাক নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষকরা জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড সিআরআইএসপিআর/সিএএস৯ তিনভাবে ব্যবহার করেছিলেন- সেচের জলের সাথে মিশিয়ে, স্প্রে করে বা ধোঁয়া দিয়ে আর মাটিতে পেলেটগুলো মিশিয়ে দিয়ে। ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের গবেষকরা ১৮ টা প্রজাতির ওপর এই জেনেটিক কীটনাশকের প্রভাব দেখেছেন। প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষ, গবাদি পশু, ইঁদুর, পরাগায়ণকারী পতঙ্গ, মুরগি, কেঁচো, ছত্রাক, ফসলের মধ্যে ভুট্টা, তুলো, সয়াবিন। তিনটে ক্ষেত্রেই কীটনাশকের প্রভাব মানুষের ওপর এসে পড়েছিল। আর ১৮ টা প্রজাতির মধ্যে ১২টা প্রজাতি ‘অনিচ্ছাকৃত সংকরায়ণের’ শিকার হয়েছিল। যারা টার্গেটগ্রুপ নয় তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলো চিহ্নিত করার জন্য, জৈব বিপাকীয় পথ বিশ্লেষণ করা হয়েছিল, যা প্রকাশ করেছে যে ১২টা প্রজাতির মধ্যে ১৫৫টা বিপাকীয় পথ সমৃদ্ধ হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই মানুষের জিনোমে দেখা গেছে। এই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন মানুষ আগে কখনও হয়নি, কারণ জেনেটিক পরীক্ষা গবেষণাগারের ছোটো পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকত, ফলে টার্গেট গ্রুপ বাদে অন্য কেউ এতে উন্মুক্ত হতনা। এই গবেষণা এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নিউজিল্যান্ড তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুবিধার জন্য ‘জিন পরিবর্তন’ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন পরীক্ষাগারের বাইরে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তাবিত প্রয়োগের জন্য নতুন ধরনের ঝুঁকি মূল্যায়নের কাঠামো প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =