জৈব চিকিৎসার অতীত ভ্রমণ

জৈব চিকিৎসার অতীত ভ্রমণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুন, ২০২৫

৬৬ মিলিয়ন বছর পুরনো ডাইনোসরের ফসিল হতে পারে ভবিষ্যতের ক্যানসার চিকিৎসার চাবিকাঠি। তার জীবাশ্ম-হাড়ে লুকিয়ে থাকতে পারে এমনই এক কোষ আর প্রোটিনের ছাপ যাতে ধরা ক্যানসারের বিবর্তন। আঙ্গলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা মিলে ব্যবহার করেছেন আধুনিক প্যালিওপ্রোটিওমিক্স প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মূলত জীবাশ্মের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রোটিন শনাক্ত করতে সক্ষম। পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ‘টেলম্যাটোসরাস ট্রান্সসিলভানিকাস’ নামের এক উদ্ভিদভোজী, হংসচঞ্চু ডাইনোসর, যে একসময় আজকের রোমানিয়া অঞ্চলের জলাভূমিতে ঘুরে বেড়াত। উচ্চ-রেজোলিউশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা গেছে, জীবাশ্মের হাড়ের মধ্যে রক্তকণিকার গঠন রয়েছে। এমনকি কিছু প্রোটিনের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। এতদিন যে কোষগুলিকে কেবল নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হত, সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে এই আবিষ্কার। অর্থাৎ, জীবাশ্মে কোষগত উপাদান অনেক বেশিপরিমাণে সংরক্ষিত থাকতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, জীবাশ্মে থাকা এই প্রোটিন ও বায়োমার্কারের বিশ্লেষণ কেবল প্রাগৈতিহাসিক রোগ নয়, বরং ক্যানসারের মতো রোগও কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তার খোঁজ দিতে পারে। একাধিক গবেষণায় ইতিমধ্যেই টেলম্যাটোসরাসের শরীরে ক্যানসারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অধ্যাপক জাস্টিন স্টেবিং বলছেন, “ডাইনোসররা দীর্ঘজীবী ও বৃহৎ দেহধারী ছিল, তাই তাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কেমন ছিল, তা জানাটাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিন যতটা দ্রুত নষ্ট হয়, প্রোটিন ততটাই স্থিতিশীল, বিশেষত হাড়ের ভিতরে। ফলে সেগুলির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে রোগের জিনগত ইতিহাস।”এই গবেষণা যেন নতুন বিজ্ঞানের এক আহ্বান। শুধু কঙ্কাল নয়, এখন থেকে সংরক্ষিত সফট টিস্যুগুলিকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ ভবিষ্যতের ‘জৈব চিকিৎসার অতীত ভ্রমণ ’ শুরু হয়ে গেছে, আর ডাইনোসরই তার প্রথম যাত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 1 =