
সাগরবিদদের কাছে স্টাইরোফোম জিনিসটা খুব প্রয়োজনীয়। স্টাইরোফোম হল এক ধরণের সাদা প্লাস্টিক, যা দিয়ে খাবারের ধারক বাক্স ইত্যাদি বানানো হয়। আর ফোম হল কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত জমাট রবারের ফেনা থেকে তৈরি নরম পদার্থ, যা আমরা কুশন প্রভৃতির গদি হিসেবে ব্যবহার করি। যখনই কোনো সাগরবিদ সাগরে যান, তখন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে বেঁধে সাগরের গভীর জলে এই স্টাইরোফোমের তৈরি অনেক কাপ পাঠিয়ে দেন। এটাই চালু রেওয়াজ। চাপের প্রভাবে বস্তুর ভৌত ধর্মে অনেক বিদঘুটে পরিবর্তন ঘটে। জলের বিভিন্ন গভীরতায় চাপ আলাদা হয়। সেই বিভিন্ন চাপের ঠেলায় স্টাইরোফোমের এই কাপগুলো নাটকীয়ভাবে কুঁচকে যায়। সাগরবিজ্ঞানীদের অভিযানে এই কুঁচকে যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে একটা কঠিন পরিহাস আছে। কারণ, সাগরে তো এমনিতেই প্রচুর অণু-প্লাস্টিক জমা পড়ে, তার মধ্যে পলিস্টিরিন-ও থাকে, যা দিয়ে ওই স্টাইরোরোফোম তৈরি। প্লাস্টিক জৈব পচনশীল নয়, কোনো সিস্টেমে একবার ঢুকলে আর বেরোয় না। ফলে প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। অথচ সাগরবিদ গবেষকরা নিজেরাই সাগরে সেই জমে-থাকা প্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন! তাহলে কী করণীয়?
কেমন হত যদি অন্য এক ধরনের কৃত্রিম ফোম পাওয়া যেত যা অপেক্ষাকৃত জৈব পচনশীল? এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা অনেকদিন ধরেই চলছে। উদ্ভিদের মধ্যে থেকে সেলুলোস পলিস্যাকারাইড সংগ্রহ করে তা থেকে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় সেলুলোস অ্যাসিটেট। এ দিয়ে তৈরি অনেক জিনিস বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। ‘লেগো’ বলে এক রকমের ইট, ফিল্মের পটি এসব তো বহুকাল ধরেই জনপ্রিয়। এবার উড্স হোল ওশানোগ্রাফিক ইন্সটিটিউশন সেলুলোস ডাই-অ্যাসিটেট (সিডিএ) নামে এক নতুন ধরণের ছিদ্রযুক্ত পদার্থ তৈরি করেছে যা এমন ফোম সৃষ্টি করে যার উপাদানগুলি সাগরের পরিবেশে অনেক দ্রুত ভেঙে গিয়ে পরিবেশে বিলীন হয়ে যায়। গবেষকরা দেখেছেন, সাগরজলের প্রবাহ-সিস্টেমে ছত্রিশ সপ্তাহ কাটাবার পর তাদের ভর ৬৫-৭০% কমে যায়। একই পরিস্থিতিতে পলিস্টিরিন ফোমে কিন্তু কোনোই পরিবর্তন ঘটে না। এই ফল থেকে মনে হচ্ছে, প্লাস্টিক ফোমের তৈরি যেসব জিনিস একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়, তাদের বদলে এই সিডিএ ব্যবহার করলে হয়তো সাগরের জলে প্লাস্টিক “পদচিহ্ণ” কমানো যবে। সাগরজলের পরিবেশে জমে থাকা প্লাস্টিক একটা বড়ো সমস্যা। কাজেই অভিনব জৈব পচনশীল এই প্লাস্টিকের প্রবর্তন একটা সম্ভাবনাময় ঘটনা। তবে তার অর্থ এ নয় যে এর সাহায্যেই সাগর-দূষণ সমস্যার সমাধান বার করা যাবে। বলাই বাহুল্য, সার্বিকভাবে প্লাস্টিক, বিশেষ করে সেই ধরনের প্লাস্টিক যা মোড়ক হিসেবে একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়, তার ব্যবহার কমানোই আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবার আগে প্রয়োজন ।
সূত্র: Earthshift, Museum of Science http://<earthshift@e.mos.org>