
ফিলিপ শ্মিডবাউয়ার, মাডিটা হান এবং আন্ড্রিয়াস নীয়েডার নামে জার্মানির টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রাণি-শারীরতত্ত্ববিদ কাক নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর দেখতে পেয়েছেন, অন্তত একটি প্রজাতির কাক সুনিয়মিত জ্যামিতিক আকার চিনতে পারে। তাঁদের গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস পত্রিকায়।
এর অর্থ, ওই প্রজাতির কাক একটা দলের মধ্য থেকে একটি বিশেষ গড়নকে দলছুট বলে চিনে নিতে পারে। যেমন, প্লাস্টিকের তৈরি একদল চাঁদের মধ্যে একটি তারা। শুধু কাক নয়, শিম্পাঞ্জি আর বোনোবোদের নিয়েও এই পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে, একমাত্র মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর মধ্যে এই ক্ষমতার নিদর্শন মেলেনি। ফলত এই গবেষক দল একটু সংশয় নিয়েই পচাগলা মাংস-খেকো প্রজাতির কাক নিয়ে কাজে নেমেছিলেন। এদের বেছে নেওয়ার কারণ, আগেকার পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল এদের যেমন বুদ্ধি তেমনি জ্যামিতিক দক্ষতা। তাঁরা পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন কম্পিউটার পর্দার সাহায্যে। কাকদের বলা হয়েছিল বাইরের দলছুট অংশটিতে ঠোক্কর দিতে। ঠিক জায়গায় ঠোক্কর দিলেই তারা মনের মতো ভোজ পাবে। সবকটা কাকই চটপট কাজ শিখে নিল। যেমন আয়তক্ষেত্র দিয়ে সাজানো একটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই একটি করে তারায় ঠোক্কর মারতে পারল। কার দক্ষতার মাত্রা কতটা তা মাপবার জন্য এবার গবেষকরা তাদের একটু অন্যরকম জিনিস দেখাতে শুরু করলেন। যেমন অনেকগুলো সোজা বাকসোর মাঝে একটু হেলিয়ে রাখা একটা বাকসো। এবার আর আগের মতো নিখুঁত হল না তাদের বাছাই, কিন্তু তাই বলে সেটা মোটেই ‘লাগে তুক না-লাগে তাক’ ধাঁচের নয়।
উদ্দীপনা সন্ধায়ক (প্রোব) ছকের প্রামাণ্য উদাহরণ। উপরে বাঁদিকের আকারটি বিকৃত। এটিকে বসানো হল ডানদিকের পাঁচটি অবিকৃত আকারের পাশে। ওটি যে অবিকৃতদের থেকে আলাদা সেটা ওরা বুঝতে পারে কিনা এই হল পরীক্ষা। (স্বীকৃতি: Science Advances (2025). DOI: 10.1126/sciadv.adt3718)
একটানা পরীক্ষা চালিয়ে বোঝা গেল কাকগুলো কিছু সমকোণ, সমান্তরাল রেখা তো বটেই, এমনকি কিছু প্রতিসাম্যও বুঝতে পারে। গবেষকরা বলছেন, তাঁদের পরীক্ষানিরীক্ষার ফল যথেষ্ট প্রত্যয়জনক। কাকেরা যে সুনিয়মিত জ্যামিতিক আকৃতি চিনতে পেরেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাও লক্ষণীয় যে কোনোরকম তালিম ছাড়াই তারা একাজ সমাধা করতে পেরেছিল। এঁদের গবেষণার ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে আরও অনেক প্রাণীরও নিশ্চয়ই এই ক্ষমতা আছে।
(A) উদ্দীপনার পরীক্ষা: বাঁদিকে পাঁচ জোড়া করে অ-চতুর্ভুজ আকৃতি তাদের সামনে রাখা হল। এগুলি তাদের চেনা, ওইগুলির পটভূমিতেই তাদের তালিম দেওয়া হয়েছিল। ডান দিকে (B) রাখা হল পাঁচটি চতুর্ভুজ আকৃতি। এইগুলি দিয়ে তাদের উদ্দীপনার পরীক্ষা যাচাই করা হবে। সুনিয়মিত চতুর্ভুজ জ্যামিতিক আকার থেকে এই পাঁচটি আকারের বিচ্যুতি তারা ধরতে পারে কিনা এটাই হল পরীক্ষা। চতুর্ভুজগুলির জ্যামিতিক আকার বাঁথেকে ডান দিকে উত্তরোত্তর বদলে বদলে গেছে। সমান্তরাল রেখা, প্রতিসমতা, লম্বতা, বাহুগুলির সমদৈর্ঘ্য, সমান কোণ – এই ধর্মগুলি কেবলি বদলে বদলে গেছে। এখানে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে জ্যামিতিক আকারগুলি উত্তরোত্তর অনিয়মিত করে সাজানো আছে। সূত্র: (স্বীকৃতি: Science Advances (2025). DOI: 10.1126/sciadv.adt3718)