টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস

টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস

আমরা সকলে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সাথে পরিচিত, তবে আমরা সম্ভবত টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নই। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ল্যাটেন্ট অটোইমিউন ডায়াবেটিস (LADA) নামে পরিচিত, টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিসে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আইকনিক আমেরিকান পপ ব্যান্ড এনএসওয়াইএনসি-তে তার ভূমিকার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ল্যান্স বাস, সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন যে তিনি এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, আর এর পর থেকেই মানুষ এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এখন প্রশ্ন হল টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস কী? এবং কীভাবে এটি নির্ণয় এবং চিকিত্সা করা হয়?
ডায়াবেটিস মেলিটাসের ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজ (চিনির) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। আসলে দশটিরও বেশি ধরনের ডায়াবেটিস আছে, তবে সবচেয়ে সাধারণ হল টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস একধরনের অটোইমিউন অবস্থা যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের কোশকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে যার ফলে সেই অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিসৃত হরমোন ইনসুলিন উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ইনসুলিন ওষুধের প্রয়োজন হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু বা অল্প বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কোনো অটোইমিউন অবস্থা নয়। শরীরের কোশগুলো যখন সময়ের সাথে সাথে ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং অগ্ন্যাশয় আর এই প্রতিরোধকে অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হয় না সেই অবস্থাকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিছুটা পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় তবে শিশু এবং যুবকদের মধ্যে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে দেখা যাচ্ছে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মতো, টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিসেও ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ের কোশগুলোকে আক্রমণ করে। কিন্তু টাইপ ১.৫ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না। ধীরে ধীরে তা ঘটে। টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিকে রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়, যেখান টাইপ ১ রোগীদের সাধারণত রোগ নির্ণয়ের সময় থেকেই এটি প্রয়োজন হয়। টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস সাধারণ ৩০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত, এই ডায়াবেটিস প্রাথমিকভাবে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে চিকিত্সা করা হয় যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করেও যখন রক্তে গ্লুকোজের গড় মাত্রা স্বাভাবিক সীমার থেকে বেড়ে যায়, তখন চিকিত্সক ইনসুলিন নিতে বলেন। তবে, টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিসের জন্য সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত ব্যবস্থাপনা বা চিকিত্সার কৌশল নেই। অনুমান অনুসারে ৫-১০% সময় টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস রোগীকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসাবে ভুল নির্ণয় করা হয়। সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। তাছাড়াও রোগ নির্ণয়ের মানদণ্ড সীমিত। তবে রোগের ভুল নির্ণয় বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ ভুল নির্ণয় হলে তারা সময়মতো প্রয়োজনীয় ইনসুলিন পান না। ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে এবং জটিলতার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।