
টাইফয়েড এক সময়কার মারাত্মক রোগ। সালমোনেল্লা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া তার কর্তা। আজ অবশ্য উন্নত দেশে টাইফয়েড কার্যত অশ্রুত। কিন্তু অতি সম্প্রতি ইনি আবার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছেন। ২০২২ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, সালমোনেল্লা জনিত টাইফয়েড জ্বর আবার হচ্ছে এবং সালমোনেল্লা টাইফির নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী প্রজন (স্ট্রেইন) আসরে নেমেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে গবেষকরা নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর ভারত থেকে সংগৃহীত ২৪৮৯টি প্রজনের সালমোনেল্লার জিন-পর্যায় নিরূপণ করেন। দেখা যায়, ওষুধ-প্রতিরোধী সালমোনেল্লার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শুধু পুরোনো বহু-প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকই নয়, অপেক্ষাকৃত আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিকও এদের ওপর আর কাজ করছে না। সবচেয়ে বড়ো কথা, দুনিয়া জুড়ে এইসব অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী প্রজনের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গবেষণা চালানোর সময়েই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ জেসন অ্যান্ডড়ুজ বলেছিলেন, যে হারে এদের প্রসার ঘটছে তা অতি বিপজ্জনক। এখনই এদের এই প্রসার থামানোর জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, বিশেষ করে যেসব দেশে এদের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। টাইফয়েড রোগের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী প্রজন প্রথম ধরা পড়ে ২০১৬ সালে, পাকিস্তানে। ২০১৯ সালের মধ্যেই সেটি ওই দেশের সালমোনেল্লা টাইফির প্রধান জিন-বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে টাইফয়েডের চিকিৎসা করা হত নানান গোত্রের কুইনোলোন, সেফালোস্পোরিন, ম্যাক্রোলাইড প্রভৃতির সাহায্যে। কিন্তু ২০০০ সালের শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছিল সালমোনেল্লা জীবাণুর এমন সব পরিব্যক্তি (মিউটেশন) ঘটেছে যেগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর সিঙ্গাপুরের ৮৫% কেসেই কুইনোলোন-প্রতিরোধী। সেফালোস্পোরিন-প্রতিরোধের সংখ্যাও বাড়ছিল। আজকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ছাড়া আর কেউই এদের কাবু করতে পারে না। কিন্তু ২০২২ সালের গবেষণা থেকে দেখা গেছে অ্যাজিথ্রোমাইসিন-প্রতিরোধী মিউটশনের সংখ্যাও বাড়ছে। সমস্যা ঘনীভূত।
চিকিৎসা ঠিকমতো না হলে ২০% টাইফয়েড কেস মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীতে বছরে ১১ মিলিয়ন লোক টাইফয়েডে ভোগে। টাইফয়েড ভ্যাকসিন দিয়ে ভবিষ্যতের ব্যাপক সংক্রমণকে হয়তো কিছুটা রোখা যেতে পারে, কিন্তু বিশ্বজুড়ে সে-ভ্যাকসিন লভ্য হওয়া চাই। তা নাহলে পৃথিবীতে শিগগিরই আর একটা স্বাস্থ্য সংকট ঘটতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া হয়তো টাইগয়েড জ্বরের ঘাঁটি হয়ে উঠবে। ৭০% রোগ এখানেই হবে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে, আজকের এই বিশ্বায়িত দুনিয়ায় রোগ ছড়াতে একটুও সময় লাগে না। এজন্য টাইফয়েড ভ্যাকসিনের পাশাপাশি নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য গবেষণা চালানোও দরকার। ভারতের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, শহরাঞ্চলের বাচ্চাদের টাইফয়েড ভ্যাকসিন দিলে রোগের সংখ্যা এবং মৃত্যুহার ৩৬% পর্যন্ত কমে আসে। পাকিস্তান এ ব্যাপারে অগ্রণী। সে-দেশেই প্রথম নিয়ম করে টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশেরও উচিত পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করা। হাতে সময় খুব বেশি নেই। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল দ্য লানসেট মাইক্রোব পত্রিকায়।