
গত বছর বিশ্বব্যাপী ১ কোটিরও বেশি মানুষ হামে আক্রান্ত হয়েছিল যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে টিকাকরণের ক্ষেত্রে কতটা ফাঁক রয়ে গেছে। সম্প্রতি এমন তথ্য জানা গেছে এক গবেষণায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র যৌথ প্রকাশনা অনুসারে, ২০২৩ সালে, বিশ্বব্যাপী, আনুমানিক ১ কোটি ৩ লাখ মানুষ হামে সংক্রামিত হয়েছিল। ২০২২ সালের তুলনায় সংক্রমণ ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রকট হয়ে উঠেছে টিকাদানের ব্যর্থতা।
হাম বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগ। প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের জন্য হাম/রুবেলা ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ কমপক্ষে ৯৫% শিশুর প্রয়োজন। কিন্তু ২০২২-২৩ সালে, বিশ্বব্যাপী মাত্র ৮৩% শিশু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে হামের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, কিন্তু কোভিড মহামারীর আগে এই পরিসংখ্যান ছিল ৮৬%। এই গবেষণায় দেখা গেছে পরবর্তীক্ষেত্রে মাত্র ৭৪% শিশু দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে। হু-এর প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন হামের টিকা গত ৫০ বছরে অন্য যে কোনও ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক বেশি জীবন রক্ষা করেছে। আরও বেশি জীবন বাঁচাতে এবং এই মারাত্মক ভাইরাসের হাত থেকে প্রতিটি শিশুকে রক্ষা করতে টিকাদানে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে, তাদের বাসস্থান বিশ্বের যে কোণায় হোক না কেন। টিকাদানে ঘাটতি থাকার ফলে ২০২৩ সালে ৫৭টি দেশে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, অথচ ২০২২ সালে মাত্র ৩৬টি দেশে এই রোগ দেখা গেছিল। আমেরিকা ব্যতীত সমস্ত অঞ্চল প্রভাবিত হয়েছিল, এবং আফ্রিকায় এর প্রাদুর্ভাব ভীষণ আকারে দেখা যায়। যে ভাইরাস র্যাশ, জ্বর এবং ফ্লু-এর মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, ছোটো বাচ্চাদের মধ্যে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে সেই ভাইরাস ২০২৩ সালে ১০৭৫০০ জন বাচ্চাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স পাঁচ বছরের কম। তবে আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে এই পরিসংখ্যান আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ কমেছে। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন যে এই হ্রাসের মূল কারণ হল যে সব দেশ এবং অঞ্চলে পুষ্টির মান উন্নত এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নাগালের মধ্যে রয়েছে সেখানে হামে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা কম ছিল। আজও বহু শিশু এই রোগে মারা যাচ্ছে এবং তা প্রতিরোধ করা যায়। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, ৮২টি দেশ হাম নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে ও তা বজায় রেখেছে। গবেষকদের মতে আফ্রিকা এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সমস্ত শিশুরা যাতে দুটি টিকার ডোজ পায় তা নিশ্চিত করতে জরুরি পরিষেবা ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ঠিক যে ভাবে পোলিয়ো দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে পোলিয়ো টিকা দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, ঠিক সে ভাবেই হাম ও রুবেলা নিয়ন্ত্রণে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার জন্য প্রত্যেক শিশুকে এই প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। আসলে অনেক শিশুই রুটিন ভ্যাকসিনেশনের আওতার বাইরে থাকে। সেই জন্য সরকারের পক্ষ থেকে টিকাদানের কর্মসূচি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।