টেক আর্ট : দুই সংস্কৃতির সেতু

টেক আর্ট : দুই সংস্কৃতির সেতু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এআই -এর দ্রুত উন্নতির মধ্য দিয়ে পৃথিবী যখন অগ্রসর হচ্ছে, তখন টেট মডার্ন আর্ট গ্যালারিতে এক প্রদর্শনী আর্ট ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনকে দেখাতে অতীতে ফিরে যাচ্ছে। “ইলেকট্রিক ড্রিমস: আর্ট অ্যান্ড টেকনোলজি বিফোর দ্য ইন্টারনেট” নামের এই প্রদর্শনীতে প্রায় ১৫০টি পুরানো ‘টেক আর্ট’ প্রর্দশিত হয়েছে এবং এই প্রদর্শনী জুন মাস পর্যন্ত চলবে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের শিল্পীরা কিভাবে তাদের সময়ের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলির প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তা এই প্রদর্শনীতে বিশদভাবে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মাইক্রোওয়েভ রেডার এবং সিনথেটিক ফাইবারের মতো উদ্ভাবনগুলি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছিল। বিশ্বের প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার কলোসাসের উন্নয়ন এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল।
এই পুরোনো প্রযুক্তির শিল্পকর্মগুলি থেকে উদ্ভাবনী কৌশল এবং উপকরণের এক পরিচয় ফুটে ওঠে যা গতিশীল এবং চাক্ষুষ আর্টের মিশ্রণের ফসল । একজন শিল্পী সামিয়া হালাবি তার শিল্পে কম্পিউটার অ্যালগরিদম অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য প্রোগ্রামিং শিখেছিলেন। তার শিল্পকলার গতিশীল বিন্যাসগুলি প্রথম দিকের কম্পিউটার পর্দা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যা প্রযুক্তি এবং শিল্পকে মিলিয়েছিল।
ভেরা স্পেনসারের “আর্টিস্ট ভার্সেস মেশিন” ১৯৫৪ সালে তৈরি হয়েছিল। ভেরা স্পেনসারের মনোমুগ্ধকর পাঞ্চ কার্ডের কোলাজটি প্রাথমিক কম্পিউটার শিল্পের একটি চমকপ্রদ উদাহরণ। এই কার্ডগুলি একসময় প্রথম যুগের কম্পিউটারগুলির মৌলিক তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ‘বিট’ হিসাবে কাজ করত, এখন একটি আকর্ষণীয় শিল্পকর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৫৬ সালে শিল্পী আতসুকো তানাকা বৈদ্যুতিক পোশাক তৈরি করেছিলেন, যা ওসাকার ঝলমলে নিওন আলোর দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং ২০০টি ঝলমলে বাল্ব দিয়ে তৈরি। এর ওজন ছিল ৬০ কিলোগ্রাম এবং বিদ্যুতের প্রবাহের কারণে এটি পরিধানকারীর জন্য ছিল বিপজ্জনক। প্রযুক্তি এবং জাপানি কিমোনোর সংমিশ্রণে তৈরি এই পোশাকটি থেকে বোঝা যায় কিভাবে প্রযুক্তি একই সঙ্গে মুগ্ধতা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
প্রদর্শনীর আরও কিছু কাজ আধুনিক কম্পিউটার ভিত্তিক সংস্কৃতির বিভিন্ন দিকের পূর্বাভাস দেয়। মনিকা ফ্লেশমান এবং ভলফগ্যাং স্ট্রাউসের “লিকুইড ভিউজ নার্সিসাস’ ডিজিটাল রিফ্লেকশনস” ১৯৯০ সালের প্রথম দিকের একটি কম্পিউটার ভিত্তিক শিল্পকলা, যা দর্শকের প্রতিফলনের সাথে যুক্ত হতে পারে। এই কাজটি বর্তমান সেলফি সংস্কৃতির একটি পূর্বাভাস , যেখানে ক্যামেরার প্রতিফলন আত্মমূল্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছে।
প্রদর্শনীটিতে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের শিল্প কর্ম রয়েছে, যেমন ক্রোয়েশিয়ার নিউ টেনডেন্সেস আন্দোলন, যা কম্পিউটার-আধারিত শিল্পকে একটি গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া হিসাবে দেখেছিল। এছাড়াও, আর্ট কালেকটিভ এক্সপেরিমেন্টস ইন আর্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (E.A.T.) ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইনের সাথে যৌথভাবে ১৯৭০ সালে বিশ্বের প্রথম ‘প্রোটো চ্যাটরুম’ তৈরি করেছিল।

“ইলেকট্রিক ড্রিমস” থেকে বোঝা যায়, কিভাবে শিল্পীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমাজে তার প্রভাব অন্বেষণ এবং তার সমালোচনা করেছেন। প্রদর্শনীটি দর্শকদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, কেবল প্রযুক্তি বিশারদরাই নয়, শিল্পীরাও ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে পারেন। এটি একটি মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − seven =