
বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুললেও কতটা মানসম্মত করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্রতি মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে দূরচিকিৎসা ( টেলিমেডিসিন) এবং ব্যায়াম অ্যাপগুলি টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় না। দূরচিকিৎসা হলো রোগীদের দূর থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের একটি পদ্ধতি । গবেষণার প্রধান জানিয়েছেন, এই গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে আমরা বর্তমানে ভুল বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করছি। বাস্তব জীবনে সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তারী পরামর্শই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং আগে করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলি তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমানো সম্ভব।
দূরচিকিৎসা ও বাজার চলতি নানা প্রশিক্ষণ অ্যাপ জীবনযাত্রার পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে কিনা সেটি দেখার জন্য জার্মানি জুড়ে ১১ টি স্থানে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণার জন্য ৫০২ জন রোগীকে (বেশিরভাগই পুরুষ) দুটি দলে ভাগ করা হয়েছিল।একটি দলকে মানসম্মত খাদ্যের পরামর্শ এবং ব্যায়াম সম্পর্কিত নানা তথ্য দেওয়া হয়েছিল। অন্য দলকে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যয়ামের পাশাপাশি কিছু পুষ্টির পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণার শুরুর দিকে অংশগ্রহণকারীদের নিয়মিত ফোন কলের মাধ্যমে তাদের অগ্রগতি ও এই কর্মসূচি সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়া হয়েছিল। পরের দিকে তারা নিজেরাই এগুলি অনুশীলন করে । ছয় মাস পর প্রথম দলে অংশগ্রহণকারীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার সামান্য উন্নতি দেখা গিয়েছিল। যদিও রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের মতো অন্যান্য সমস্যাগুলোর ওপর এই পরীক্ষার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
প্রশিক্ষণ এবং খাদ্যাভ্যাসের নির্দেশিকা মেনে চলা অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ০.৩ শতাংশ উন্নতি দেখা গেছে। গবেষণায় শরীরের ওজন, কোমরের আকার এবং রক্তের চর্বিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।
গবেষণাটি প্রমাণ করে যে সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত, অনেকেই এটি মেনে চলেননি। গবেষণার প্রথমদিকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম করেছেন। যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম করেননি, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক জনই সপ্তাহে একবারও ব্যায়াম করেননি। আরও খারাপ বিষয় হল, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ২৫ শতাংশ প্রশিক্ষণ শুরুই করেননি। কারণ হিসেবে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৮ বছর বয়সীদের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ এবং যন্ত্র ব্যবহার করা বেশ কঠিন বলে মনে হয়েছিল।
গবেষকদের মতে অ্যাপ-ভিত্তিক পদ্ধতির সাফল্য পরিমাপের জন্য আরও বড়ো গবেষণা প্রয়োজন। জার্মানিই প্রথম ইউরোপীয় দেশ যারা ডাক্তারের অভাবের কারণে এই ধরনের পরিষেবাগুলিকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় এনেছে ।
গবেষকরা দেখেছেন এই পরীক্ষা খুব একটা কার্যকর হয়নি। এর কারণ হল গবেষকেরা যাদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন তারা বয়স্ক, নতুন প্রযুক্তি শিখতে তাদের অসুবিধা হয়।
গবেষকরা বলেন বর্তমানে চিকিৎসা অ্যাপগুলির প্রচার-প্রসার সম্পর্কে আমাদের আরো ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত।
রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জার্মান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণরূপে অ্যাপ-ভিত্তিক পদ্ধতি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে না।