
আই আই টি খড়গপুরের মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রসিদ্ধ ফ্লুইড মেক্যানিক্স বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর সুমন চক্রবর্তী এবং ব্রাজিল দেশের পারানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান কার্লোস রিকার্ডো সোক্কোল, ইউনেস্কো প্রদত্ত ২০২৬ সালের টি ডব্লিউ এ এস (দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সেস) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দু বছর অন্তর অন্তর এই পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য। বিজ্ঞানের কোনো দেশ হয় না। তবু ভারতীয় হিসেবে আমরা অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তীর এই সম্মানলাভে বিশেষ আনন্দিত। সুমনবাবুর পুরস্কার প্রদানপত্রে জানানো হয়েছে, ‘মাইক্রো ও ন্যানো স্কেল প্রবাহ সংক্রান্ত বীজগর্ভ কাজের জন্য’ এবং ‘রোগনির্ণয়-প্রযুক্তি, গ্রামীণ জীবিকা ও স্বাস্থ্য-পরিচর্যাকে পশ্চাৎপদ জনসমষ্টির নাগালে এনে দেওয়ার জন্য’ তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হল। ১৯৮৪ সালে এই মর্যাদাসূচক পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের চিরস্মরণীয় পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম। লক্ষ্য ছিল নিজের দেশে বসে কর্মরত অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা যাতে প্রকৃত আন্তর্জাতিক সমাদর লাভ করেন।
কোনো বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করলে তার তাড়নায় ন্যানোস্কেল মাত্রায় কোনো ফ্লুইডের যে চলন হয় তাকে বলে ইলেক্ট্রোকাইনেটিক ন্যানোস্কেল প্রবাহ। সেই চলন মূলত প্রভাবিত হয় ফ্লুইডের ভিতরকার আহিত (চার্জড) পৃষ্ঠতল আর আয়নসমূহের আন্তঃক্রিয়া দ্বারা। এরই ফলে ওই অতিক্ষুদ্র মাত্রাতেই গড়ে ওঠে একটি পরিঘটনা, যার নাম ইলেকট্রো-অস্মোটিক প্রবাহ। এগুলিই সুমনবাবুর গবেষণার বিষয়। এইসব ক্ষেত্রেই বীজগর্ভ গবেষণা করেছেন তিনি।
পুরস্কার অবশ্য সুমনবাবুর কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগেই তিনি বহু ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রিত অধ্যাপক। তিনি জার্মানিতে আলেকজান্ডার ফন হুম্বোল্ট ফেলো, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো, ইংল্যান্ডের রয়াল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির ফেলো। বর্তমানে তিনি ভারতে জগদীশচন্দ্র বসু ন্যাশনাল ফেলো।
বহুকাল ধরেই তিনি অল্প খরচে সহজসাধ্য রোগনির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁর বেশ কয়েকটি উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুবিদিত। যেমন ‘অরোস্ক্রিন,’ যা একটি টর্চ-সদৃশ সরঞ্জাম, যার সাহায্যে মুখের ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব। নিউক্লেয়িক অ্যসিড পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ শনাক্ত করবার জন্য তিনি ‘কো ভি ৱ্যাপ’ নামে যে-পরীক্ষাপদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছিলেন সেটি আমেরিকায় পেটেন্টপ্রাপ্ত। কাগজের সরু টিকলিতে আঙুল থেকে সূচ ফুটিয়ে রক্তর ছাপ নিয়ে তা থেকে রক্তে গ্লুকোজের, হিমোগ্লোবিনের, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা এবং লিপিড-চিত্র নির্ণয় করার যে-কৌশল উদ্ভাবন করেছেন তিনি সেটি স্মার্ট ফোন দিয়েই চালানো সম্ভব। একটি বহনযোগ্য ঘূর্ণমান চাকতি ব্যবহার করে শরীর থেকে এক ফোঁটা তরল সংগ্রহ করে তা নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা করার কৌশল উদ্ভাবন করেছেন তিনি। এছাড়া একটি টিকলির সাহায্যে মহিলাদের যোনির অম্লমাত্রা পরীক্ষা করার যে-সরল পদ্ধতি তিনি উদ্ভাবন করেছেন সেটিও বাজারে চালু। তিনি এখন যক্ষ্মা রোগ-নির্ণয়ের একটি ব্যাপকাকার প্রযুক্তি গড়ে তোলা নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর লক্ষ্যই হল, অল্প খরচে, খুব ব্যায়সাধ্য ল্যাবরেটরির পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই রোগ নির্ণয় করা। তিনি জানিয়েছেন, “বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি মারফত মানবিক কাজকর্ম করার স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার পেয়ে” তিনি গর্বিত।
Covirap কো ভি ৱ্যাপ কথাটি ভুল ছাপা হয়েছে।
ওনার মত কৃতি ও সংবেদনশীল বিজ্ঞানী আমাদের বাংলায় বিরল