ডলফিনের অ্যালজাইমার্স!

ডলফিনের অ্যালজাইমার্স!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২

বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের উপকূলে তিন ধরনের প্রজাতির মৃত ডলফিন পেয়েছিলেন, যাদের মস্তিষ্কে তারা অ্যালজাইমার্স রোগের সূচক চিহ্নিত করেছিলেন।
আমাদের কাছে যে সব তথ্য নথিভুক্ত আছে, তার আগে থেকেই cetacean stranding-এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সমুদ্রের তীরে ডলফিন এবং তিমিরা সৈকতের মতো অবস্থান করে, সেখানে তারা জলের অভাবে, বা নিজেদের ওজনের চাপে মারা যায়। তবুও কেন দলে দলে তারা নিজেরা একটা সমুদ্র সৈকত তৈরি করে তা বেশ রহস্যময়।
স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক গান-মুর বলেছেন, শুধুমাত্র মানুষ-ই কী ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত হয়, এই প্রশ্নের খোঁজে দেখা গেছে, ডিমেনশিয়ার প্রকাশ, মানুষের বাইরে অন্য প্রাণীতেও দেখা যাচ্ছে।
লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মারিসা ভাচার এবং সহকর্মীরা সমুদ্রের তীরে আটকে থাকা ২২টা ডলফিনের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করতে গিয়ে, মানুষের মস্তিষ্কে অ্যালজাইমার্সের জন্য উপস্থিত জৈব রাসায়নিক মার্কারগুলির সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইলয়েড-বিটার পরত, এটাকে রোগের সরাসরি কারণ বলে মনে করা না হলেও, দেখা যায় যাদের অ্যালজাইমার্স রয়েছে তাদের মধ্যে এটা উচ্চ সংখ্যায় উপস্থিত থাকে। আর পাওয়া গেছেহা ইপারফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের ক্লাস্টার ( যখন প্রোটিন অণুর সমস্ত সম্ভাব্য বাইন্ডিং সাইটগুলিতে ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়)। প্রসঙ্গত এই টাউ প্রোটিন অ্যালজাইমার্সের সূচক, এটা শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বাধা দেয়, টক্সিসিটি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা তিনটে প্রজাতির ডলফিনের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড-বিটা আর হাইপারফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিন জমা থাকতে দেখেছেন। সেই তিন প্রজাতির ডলফিন হল, বড়ো-পাখনা বিশিষ্ট পাইলট তিমি (Globicephala melas), সাদা – চঞ্চুবিশিষ্ট ডলফিন (Lagenorhynchus albirostri), বটলনোজ ডলফিন (Tursiops truncatus)। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, এই প্রাণীগুলোর মধ্যে বয়সের ছাপও পড়েছিল, যেমন দাঁত পড়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া, মস্তিষ্কের ধূসর অংশের তুলনায় সাদা অংশের বৃদ্ধি। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালজাইমার্সের ফলে যেমন স্মৃতি, শিখন, ভাব আদান প্রদানের ক্ষমতা লোপ পায়, তেমনি এই রোগের শিকার হল ডলফিন, তিমির মতো আমাদের স্তন্যপায়ী জলচর সাথীরা।