
সাম্প্রতিক এক আবিষ্কার ডাইনোসরের প্রজনন আচরণ এবং বিবর্তন সম্পর্কে নতুন আলোকপাত করেছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে, একটি ডাইনোসরের ডিমের ভিতরে সংরক্ষিত ভ্রূণ পাওয়া গেছে। বয়স আনুমানিক ৭ কোটি বছর। এই জীবাশ্ম প্রথমে আবিষ্কৃত হয় গ্যানঝোউ অঞ্চলে, যা জীবাশ্মবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ । খননকাজ চলাকালীন একটি অস্বাভাবিক আকারের শিলাখণ্ড গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, এর ভেতরে রয়েছে একটি ডাইনোসরের ডিম, এবং সেই ডিমের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে ভ্রূণ। ডিমটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ সেন্টিমিটার । প্রাপ্ত ভ্রূণটি অর্নিথোমাইমিড পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত কোটি কোটি বছর পরেও কোন ডাইনোসরের নরম কোষকলা বা ভ্রূণ সংরক্ষিত থাকা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। এই কারণেই এ অসাধারণ এক বিস্ময়। গবেষকরা বলছেন, ভ্রূণটি এমন অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল যেন মনে হয় তা এখনই ফুটে বের হবে। ভ্রূণটির কঙ্কাল বাঁকানো অবস্থায় ছিল, যা আজকের পাখির ভ্রূণের ভঙ্গিমার সঙ্গে বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। ফলে, আধুনিক পাখি যে আসলে থেরোপড ডাইনোসরেরই সরাসরি উত্তরসূরি তার প্রমাণও এটি। পাখিদের মতো একই ভঙ্গিতে ডিমের ভেতরে ভ্রূণটির অবস্থানে, বিবর্তনের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডাইনোসরের ভ্রূণ ও পাখির ভ্রূণের মধ্যে এই মিল ডাইনোসরের প্রজনন আচরণের উপর নতুন আলো ফেলবে। ভ্রূণটির বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞানীরা মাইক্রো-কম্পিউটার টমোগ্রাফি ব্যবহার করেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিমটিকে না ভেঙেই ভেতরের গঠন দেখা সম্ভব হয়। ভ্রূণটির হাড় এবং ভঙ্গি এতটাই সুস্পষ্ট যে এটি ভবিষ্যতে ডাইনোসরের বিকাশ প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। এ আবিষ্কার কেবল এক বিরল জীবাশ্ম সংরক্ষণ নয়, এটি ডাইনোসরের আচরণ, প্রজনন ও বিবর্তনের ধারাকে বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়। আজকের পাখিরা ডিমের ভেতরে ভ্রূণের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে, যাতে সেগুলি সফলভাবে ফুটতে পারে। একই রকম আচরণ কোটি বছর আগেও ডাইনোসর ভ্রূণের মধ্যে দেখা গিয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে পাখির প্রজনন বৈশিষ্ট্যের শিকড় প্রাচীন ডাইনোসরের মধ্যেই নিহিত ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের আরও জীবাশ্ম আবিষ্কার হলে ডাইনোসরের জীবনধারা নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটাই কাটবে। বিশেষ করে তারা কীভাবে ডিম পাড়ত, বাচ্চা ফোটাত এবং প্রজননের সময় তাদের আচরণ কেমন ছিল- এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। একইসঙ্গে এ ধরনের ভ্রূণ সংরক্ষণের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে প্রাগৈতিহাসিক জলবায়ুর অবস্থাও অনুমান করা সম্ভব হবে। গবেষক দলের একজন বলেন, “এটি জীবাশ্মবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এমন একটি মুহূর্ত যা শতাব্দীতে একবার ঘটে। কোটি কোটি বছর ধরে ভ্রূণটির এমনভাবে সংরক্ষিত থাকা সত্যিই অবিশ্বাস্য।”
সূত্র : An exquisitely preserved in-ovo theropod dinosaur embryo sheds light on avian-like prehatching postures
by Lida Xing , iScience (Volume 25 ; 21st January, 2025)