ডাইনোসরদের আমরা সাধারণত কল্পনা করি স্তন্যপায়ীদের পূর্বসূরি হিসেবে। বিশাল দেহ, প্রকাণ্ড শক্তি আর প্রাগৈতিহাসিক আধিপত্যের প্রতীক। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই তুলনা আসলে ভ্রান্ত। ডাইনোসর ও স্তন্যপায়ীদের মধ্যে পার্থক্য শুধু আকার বা আধিপত্যে নয়, তারা কীভাবে তাদের সন্তান বড় করত—সেই কৌশলেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত বৈচিত্র্য।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ভূতত্ত্ববিদ টমাস আর হোল্টজ জুনিয়রের গবেষণা আমাদের পরিচিত ধারণায় এক চমকপ্রদ ফাটল ধরিয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সন্তানরা দীর্ঘদিন মায়ের ছায়ায় বড় হয়। বাঘের শাবক, হাতির বাচ্চা কিংবা মানুষের শিশুরা প্রায় পূর্ণবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত একই পরিবেশে, একই খাদ্যজালে ও একই ঝুঁকির ভেতরেই বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ, বাবা-মা ও সন্তান—দু’পক্ষই প্রায় একই বাস্তুতাত্ত্বিক ভূমিকা পালন করে।
ডাইনোসরদের গল্পটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা ডিম পাড়ত, একসঙ্গে অনেক শাবকের জন্ম দিত এবং আশ্চর্যজনকভাবে খুব দ্রুতই সন্তানদের নিজেদের মতো ছেড়ে দিত। কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যেই কিশোর ডাইনোসররা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াত, নিজেরাই খাদ্য সংগ্রহ করত, আর শিকারির চোখ এড়িয়ে টিকে থাকার লড়াই চালাত। বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন—”ল্যাচকি কিড ডাইনোসর”।
এই স্বাধীনতার ফল ছিল বহুমাত্রিক। একই প্রজাতির ডাইনোসর জীবনের বিভিন্ন ধাপে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে বাস করত। একটি শিশু ব্র্যাকিওসরাস, আকারে কুকুর বা ভেড়ার মতো, নীচু গাছপালা খেত এবং ছোট আকারের মাংসাশীদের কাছে ছিল সহজ শিকার। অথচ পূর্ণবয়স্ক ব্র্যাকিওসরাস—৪০ ফুট উঁচু এক জীবন্ত টাওয়ার—খেত গাছের শীর্ষের পাতা, যেখানে তার শিকারীরাও ভিন্ন।
ফলে ডাইনোসরদের একেকটি জীবনধাপ কার্যত একেকটি স্বতন্ত্র কার্যকর প্রজাতি হয়ে উঠেছিল। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, মেসোজোয়িক যুগের বাস্তুতন্ত্র ছিল অবিশ্বাস্য রকম বৈচিত্র্যময়—হয়তো আজকের স্তন্যপায়ী শাসিত পৃথিবীর চেয়েও বেশি।
গবেষকদের ধারণা, উষ্ণ জলবায়ু, উচ্চ কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং বিপুল উদ্ভিদ উৎপাদন সেই বৈচিত্র্যকে সম্ভব করেছিল। পাশাপাশি, ডাইনোসরদের বিপাক হার তুলনামূলক কম হলে কম শক্তিতেই বেশি প্রাণ টিকে থাকতে পেরেছিল।
ডাইনোসররা কেবল খোলস ও পালক পরা স্তন্যপায়ী নয়। তারা ছিল প্রকৃতির এক ভিন্ন অধ্যায়, যার সম্পূর্ণ কাহিনীটা আমরা এখনও আবিষ্কার করতেই ব্যস্ত। একবার এই ভিন্নতাকে বুঝতে পারলেই অতীতের পৃথিবী আমাদের সামনে আরও স্পষ্ট ও বিস্ময়কর হয়ে উঠবে।
সূত্র: “Bringing up baby: preliminary exploration of the effect of ontogenetic niche partitioning in dinosaurs versus long-term maternal care in mammals in their respective ecosystems” by Thomas R. Holtz Jr., 6th November 2025, Italian Journal of Geosciences.
DOI: 10.3301/IJG.2026.09
