তুয়াতারা বা স্ফেনোডেন প্রজাতির জীবন্ত জীবাশ্মদের নিয়ে নতুন গবেষণায়, বিবর্তনের হার পরিমাপ করার এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ডারউইনের তত্ত্বের উপর বিশ্বাস আরও খানিকটা মজবুত হল ব’লেই অভিমত ব্রিস্টোল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের।
নিউজিল্যান্ডের প্রধান দ্বীপগুলিতে একদা বসবাসকারী বৃহৎ সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী এই তুয়াতারা, কালের প্রকোপে তারা এখন সমুদ্র থেকে দূরে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র দ্বীপে থাকে এখন। যদিও তারা সঠিকভাবে সরীসৃপ নয়, তবুও ২৪০ মিলিয়ন বছরের প্রাচীন পূর্বপুরুষের নিরিখে তারা সমবংশজাত। তাদের বিবর্তনের ধারাটিও বেশ স্বতন্ত্র।
বর্তমানে অবশিষ্ট তুয়াতারা প্রজাতির সাথে সম্পর্কিত সমস্ত জীবাশ্মের চোয়ালের হাড় বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাদের খাদ্যাভ্যাসের অভিব্যক্তিও একইসাথে পর্যালোচনা করা হয়। অঙ্গসংস্থান সম্পর্কিত বিচারও চলে পাশাপাশি।
দুটো ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা একপ্রকার নিশ্চিত –
১) তুয়াতারার বিবর্তনের হার খুবই মন্থর। এবং
২) তাদের কঙ্কালতন্ত্র বেশ রক্ষণশীল প্রকৃতির।
মুখ্য গবেষক জর্জ হেরেরা-ফ্লোরেসের মতে, তুয়াতারার সাথে সম্বন্ধীয় জীবাশ্মগুলির বেশিরভাগই উদ্ভিদভোজী এবং এমনকি তারা জলবাসীও বটে। তাদের বৈচিত্র্যও তুলনামূলকভাবে বেশী ছিল। সেই সুপ্রাচীন যুগ থেকেই পূর্বপুরুষদের সাথে আজকের তুয়াতারার অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই অনুরূপ।
১৮৫৯ সালে যখন সর্বপ্রথম চার্লস ডারউইন ‘লিভিং ফসিল’ কথাটির প্রচলন করেন, তিনি ভেবেছিলেন সেইসব অবশিষ্ট প্রাণীদের কথা যারা হুবহু তাদের পূর্বপ্রজাতির মতো দেখতে। তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই প্রজাতিগুলি খুবই স্বল্প পরিসর স্থানে বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রতিযোগিতামূলক উদ্বর্তন থেকে দূরে অবস্থান করে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
গবেষণার সহকারী অধ্যাপক টম স্টাবসের মতে, ডারউইনের সংজ্ঞা পরীক্ষাযোগ্য ছিল না। তবে এখন সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে দেখানো সম্ভব এই জীবন্ত জীবাশ্মদের অপ্রত্যাশিত শ্লথ বিবর্তন-গতি।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিদ্যা শাখায় মেরুদণ্ডী জীবাশ্ম-বিশেষজ্ঞ মাইক বেন্টন এই গবেষণায় সাহায্য করেছেন। এই লিভিং ফসিল শব্দবন্ধটি অনেকেরই পছন্দ না, ব’লে তাঁর মত। যদিও আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সংখ্যাভিত্তিক উপায়ে বিবর্তনের হার নির্ণয় করতে সক্ষম। এবং বর্তমানে তুয়াতারাদের বিষয়ে দ্বিতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে – এই প্রজাতির অভিব্যক্তির চিহ্নগুলি স্বতন্ত্র ও কেন্দ্রীয়, শুধুমাত্র সংখ্যার দিক দিয়েও, তুয়াতারা যথেষ্ট সংরক্ষণপন্থী, ২০০ মিলিয়ন বছর আগেকার পূর্বসূরির মতোই।
প্রোফেসর বেন্টন আরও বলছেন, আমাদের গবেষণার ফলাফল ডারউইনের মতামতের সাথেই দাঁড়িয়ে। জীবন্ত জীবাশ্মের সংখ্যাগত অস্তিত্ব আমাদের কাছে আছে। এই একই পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত সনাতন উদাহরণের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।