‘ডিপ ন্যানোমেট্রি’ প্রকৌশলে ক্যান্সার নির্ণয়

‘ডিপ ন্যানোমেট্রি’ প্রকৌশলে ক্যান্সার নির্ণয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

তোকিও বিশ্ববিদ্যালয় সমেত আরও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা ‘ডিপ ন্যানোমেট্রি’ নামে একটি বিশ্লেষণী প্রকৌশল তৈরি করেছেন। অগ্রসর আলোকযন্ত্রর সঙ্গে ব্যাঘাত-দূর করার এক অ্যালগরিদ্‌ম মিশিয়ে এই প্রকৌশলটি তৈরি হয়েছে। তত্ত্বাবধানহীন ডিপ লার্নিং হল এর ভিত্তি। ডিপ ন্যনোমেট্রি নামক এই প্রকৌশলটি ডাক্তারি নমুনার মধ্যে থাকা ন্যানোকণাগুলিকে অতিদ্রুত বিশ্লেষণ করতে পারে, ফলে কোনো বিরল কণার সামান্যতম রেশটুকুও নিখুঁতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তুলনার জন্য ধরা যাক, বিক্ষুব্ধ এক সাগরে আছড়ে পড়া বড়ো বড়ো ঢেউয়ের মধ্যে একখানা ছোট্ট নৌকোকে শনাক্ত করতে হবে। বড়ো বড়ো ঢেউগুলো যদি বিকীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সাগর শান্ত হয়ে পড়বে, আর তখন নৌকোটাকে খুঁজে বার করা সহজ হবে। কৃবু-র অঙ্গগুলো ঠিক এই ব্যাপারেই সাহায্য করে। তারা ঢেউগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে শিখে নেয়, তারপর সেগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে ছেঁকে বার করে দেয়। কোশের বাইরে অবস্থিত তরলে-ভরা যেসব ছোটো ছোটো থলি ক্যান্সারের চিহ্নবাহী, সেগুলোকে শনাক্ত করার কাজে তারা নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছে। অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। অগ্রসর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের ডক্টরেট-উত্তর গবেষক এবং আরও কেউ কেউ এই গবেষণা করেছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিরল এই কণিকাগুলোকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। এই প্রকৌশলের কেন্দ্রে আছে ৩০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের (অর্থাৎ ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ) কণা শনাক্ত করার ক্ষমতা। একই সঙ্গে এটি ১ সেকেন্ডে ২ লক্ষরও বেশি কণা শনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। এতদিনকার অতিদ্রুত শনাক্তকরণ সরঞ্জামগুলিতেও জোরালো সংকেতগুলো শনাক্ত করা যেত, কিন্তু মৃদু সংকেতগুলো অনেক সময় তার নাগাল এড়িয়ে যেত। এই নতুন প্রকৌশলে কিন্তু দু ধরণের সংকেতই ধরা পড়ে। কণা শণাক্তকরণের ওপর নির্ভরশীল রোগনির্ণয়ের আরও অনেক ব্যাপক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানো যাবে। এমনকী হয়তো ভ্যাকসিন তৈরি করা আর পরিবেশের ওপর নজর রাখার কাজেও। এছাড়াও সংকেতের ব্যাঘাত দূর করার এই কৃ বু-ভিত্তিক পদ্ধতি বৈদ্যুতিক সংকেতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গবেষক ইয়ুচিরো ইওয়ামোতো বলেছেন, ‘এই প্রকৌশল গড়ে তোলাটা আমার কাছে যেন একটি ব্যক্তিগত যাত্রার মতো। এ কেবল এক বৈজ্ঞানিক উন্নতি নয়, এ আমার প্রয়াত মাতার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয়ের গবেষণায় মা-ই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আমাদের স্বপ্ন হল, প্রাণ-বাঁচানো রোগনির্নয় পদ্ধতিকে দ্রুততর এবং সকলের কাছে সুলভ করে তোলা’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − 3 =