ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় পুতুল

ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় পুতুল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ নভেম্বর, ২০২৪

 

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের বিশ্বকে বোঝার ক্ষমতা রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে পাল্টাতে থাকে। তাদের বাস্তব ধারণা, সময় ও স্থানের ধারণা অস্পষ্ট হতে থাকে, যা তাদের উদ্বেগ ও কষ্ট দেয়। উপলব্ধি ও আচরণ পালটে যাওয়া এই মানুষদের সহায়তা দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল তাদের পরিবেশে কিছু পরিবর্তন করা। এতে বেশ উপকার পাওয়া যেতে পারে, এমনকি ঘুমের ওষুধেরও প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। শুনলে অবাক হবেন, এমন একটা অদ্ভুত কৌশল হল ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে পুতুল দেওয়া। এমপ্যাথি (সমমর্মিতা )পুতুল নামে পরিচিত একটা প্রাণবন্ত পুতুল যা “শিশুর প্রতিনিধিত্ব” করে। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত কিছু মানুষকে এই পুতুল স্বস্তি প্রদান করতে পারে। স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত এই ব্যক্তিদের সাম্প্রতিক ঘটনার তুলনায় দূর অতীতের স্মৃতি বেশি স্পষ্ট থাকে। অর্থাৎ এনাদের অতীত অভিজ্ঞতায় তাদের সন্তানদের বা ছোটো বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার যে স্মৃতি থাকে তা বর্তমানের তুলনায় তাদের কাছে বেশি বাস্তব মনে হয়। এনারা বিভ্রান্তির শিকার হন, কেউ কেউ শিশুর কান্না শুনতে পান বা সন্তানকে হারানোর ভয় পান। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুতুল দিয়ে তাদের এই কষ্ট কমানো যেতে পারে।
যাদের ক্ষেত্রে থেরাপির জন্য এমপ্যাথি পুতুল থাকে, তারা পুতুলটা সত্যি সন্তানের মতো যত্ন করেন, তার সাথে আবেগে জড়িয়ে পড়েন। একজন নার্স রোগীর পুতুল অবহেলা করেছিলেন, তাতে দেখা গেছে রোগীর এই পুতুলের সাথে কতটা আবেগ জড়িত থাকে। তাই এই রোগীদের যারা যত্ন করবেন, তাদের সাবধান হওয়া উচিৎ। পুতুল পরিষ্কার করার সময় সাবধানে করতে হবে বা বাড়ির শিশুদের নাগাল থেকে রোগীর পুতুল সরিয়ে রাখতে হবে।
প্রমাণ জানাচ্ছে এই এমপ্যাথি পুতুল রোগীদের রাগ, উদ্বেগ কমিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান ভালো করে। পুতুলের মাধ্যমে শিশুর প্রতিনিধিত্বের এই থেরাপি ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে ওষুধের আওতায় আসেনা। এটা স্মৃতিচারণ থেরাপির একটা ধরন যা অতীত অভিজ্ঞতার সাথে পুনরায় সংযোগ করায়। এতে স্পর্শ সংবেদনশীলতা বাড়ে, ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি পুতুল স্পর্শ করে, তাকে জড়িয়ে ধরে আরাম অনুভব করেন। আর এই স্পর্শ সংবেদনশীলতা তার আবেগে সাহায্য করে, যোগাযোগ রক্ষায় সাহায্য করে। সব রোগীর ক্ষেত্রে এই থেরাপি পুতুল কাজ করবে না, রোগীর পটভূমি, তাকে পর্যবেক্ষণ করে তবেই এই পুতুল দেওয়া যাবে। যারা আগে সন্তানের যত্নের সাথে যুক্ত ছিলেন না, বা কেউ সন্তান হারিয়েছেন সেক্ষেত্রে এই পুতুল উপযুক্ত নয়। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষ, ডিমেনশিয়া নেই এমন ব্যক্তির মতো সামাজিক জগতকে একইভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু এই রোগী শিশু নন, তাকে সেভাবে দেখা ঠিক নয়। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পরিচর্যা কর্মীদের এই পুতুলের সাথে তার সংযুক্তি সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন, যাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে পুতুল নষ্ট না হয়, তাহলে এই রোগী খুব কষ্ট পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + 18 =