তরল ও ন্যানোফোম মিশ্রণে তৈরি নতুন হেলমেট

তরল ও ন্যানোফোম মিশ্রণে তৈরি নতুন হেলমেট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জুলাই, ২০২৩

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল এবং অ্যারোস্পেস এঞ্জিনিয়ারিং – এর সহযোগী অধ্যাপক বাওক্সিং জু এবং তার গবেষক দল, ক্রীড়া সরঞ্জামে ন্যানোফোম ব্যবহার করেছেন। তাদের গবেষণাপত্র অ্যাডভান্সড মেটিরিয়ালস-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই নতুন গবেষণায় জলের একটা রূপ নন-ওয়েটিং আয়োনাইজড তরল ও ন্যানোফোমকে একত্রিত করা হয়। এবং এই পদ্ধতিতে একটি তরল গদি বা কুশনের মতো উপাদান তৈরি করা হয়। এই উপাদানটি খেলার সরঞ্জামে ব্যবহৃত হলে ক্রীড়াবিদদের বেশ ভাল সুরক্ষা দিতে পারবে। এই ন্যানোফোমের উপাদান একটা হেলমেটের বাইরের ও ভিতরের স্তরের মাঝে দেওয়া থাকলে, তাতে মাথা দিয়ে বলে হিট করতে সুবিধা হবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন সাধারণ জলের পরিবর্তে আয়নিত জল দিয়ে ও ন্যানোফোম মিশ্রিত করে আরও পরিশীলিত উপাদান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যা এই উপাদানের কাজ করার পদ্ধতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তৈরি করেছে। উপাদানটিতে আয়নের ক্লাস্টার ও নেটওয়ার্ক যেভাবে তৈরি হয়েছে তার কারণে উপাদানটি বাহ্যিক ধাক্কায় গতিশীলভাবে সাড়া দেয়। ন্যানোপোরাস বা অত্যন্ত ছোটো ছিদ্রযুক্ত ন্যানোফোমকে আয়নিত জলের সাথে একত্রিত করে এই উপাদান কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে বাইরের ক্রিয়ার সাপেক্ষে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে কারণ এই সংমিশ্রণটি একটি ন্যানো পরিবেশে অত্যন্ত শীঘ্র তরল পরিবহনের করতে সক্ষম । এছাড়াও, ধাক্কা বা আঘাতমুক্ত হওয়ার পর অর্থাৎ, ক্রিয়ার পরে, তরল ন্যানোফোম কুশন তার আসল আকারে ফিরে আসতে পারে কারণ আয়নিত জলের অ-ভেজা প্রকৃতির কারণে তরলটি ছিদ্র থেকে বের হয়ে যায়, যার ফলে এই উপাদান বারবার আঘাত সহ্য করতে পারে। সাধারণ ফোমের ক্ষেত্রে আকারে পরিবর্তন, আকার নষ্ট হয়ে যাওয়া, নমনীয়তা কমে যাওয়া এগুলো বেশ সহজেই ঘটে, তার সাথে খুব ছোটো ছোটো আঘাতে এই উপাদানের আকার পরিবর্তন না হলেও নমনীয়তা হারিয়ে তা শক্ত হয়ে যেত। কিন্তু আবিষ্কৃত উপাদানের গতিশীল প্রতিক্রিয়ার সাথে পরিবর্তিত হওয়া এবং আবার নিজের গঠনে ফিরে আসার ক্ষমতা, বড়ো ও ছোটো আঘাত থেকে উপাদানকে নমনীয়তা দেয়।
তরল ন্যানোফোমের কুশন থাকলে হেলমেটের আভ্যন্তরীণ অংশ ধাক্কায় সংকুচিত হয়, আর এর প্রভাবক বলকে ছড়িয়ে দেয়, তার ফলে মাথায় প্রেরিত শক্তি বা ধাক্কা হ্রাস হয়ে আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস পায়। ধাক্কার প্রভাব চলে গেলে উপাদানটি তার আসল আকারে ফিরে যায়। এই উপাদান একাধিক আঘাত সহ্য করতে পারে এবং খেলা চলাকালীন অ্যাথলিটের মাথা রক্ষায় হেলমেটের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি গাড়ির যাত্রীদের সুরক্ষায় এবং পরিধানযোগ্য মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস ব্যবহার করে হাসপাতালের রোগীদের সহায়তা করার ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার হতে পারে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহযোগী অধ্যাপক ওয়েই লু জানিয়েছেন, তরল কুশনকে হালকা, ছোটো এবং নিরাপত্তা দেওয়ার সরঞ্জাম হিসাবে ডিজাইন করা যেতে পারে। দর্শক একদিন ফুটবল, বেসবল খেলা দেখতে দেখতে আশ্চর্য হয়ে ভাববে কীভাবে ছোটো হেলমেট খেলোয়াড়দের মাথা রক্ষা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + seventeen =