তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে

তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মার্চ, ২০২৪

মানুষের দেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ মস্তিষ্ক আর তার অনেকটাই আমাদের কাছে বেশ অজানা। এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের আকার সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তার ফলে তরুণ প্রজন্মের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে। গবেষণায় ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৩০০০-এরও বেশি আমেরিকানদের মস্তিষ্কের চিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে ১৯৭০-এর দশকে জন্মগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের আকার ১৯৩০-এর দশকে জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় ৬.৬% বেশি। তাছাড়াও সত্তরের দশকের সদস্যদের মস্তিষ্কে হোয়াইট ম্যাটার এবং গ্রে ম্যাটারের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সাইলেন্ট জেনারেশনের সদস্যদের তুলনায় যথাক্রমে প্রায় ৮% ও প্রায় ১৫% বেশি। মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ যা বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় হিপোক্যাম্পাস নামে পরিচিত স্মৃতিশক্তি এবং শিখনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চতা, বয়স এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে এই হিপোক্যাম্পাস পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে আয়তনে ৫.৭% প্রসারিত হয়েছে। গবেষকদের মতে জিনগত কারণ মস্তিষ্কের আকার নির্ধারণে একটি বড়ো ভূমিকা পালন করলেও বাহ্যিক প্রভাব যেমন, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত কারণও, গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। এবং বিশ্বে বার্ধক্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই রোগের নির্ণয় পরবর্তী তিন দশকে তিনগুণ হওয়ার পথে। কিন্তু আশার কথা হল গত তিন দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ডিমেনশিয়ার ঘটনা প্রতি দশকে প্রায় ১৩% হ্রাস পেয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে সম্ভবত স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং লালন-পালনের পদ্ধতিগত কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমছে বলে মনে করা হচ্ছে। সামগ্রিক বা আংশিক স্মৃতিশক্তি লোপ, কার্য-কারণ সম্পর্কযুক্ত ভাবনা চিন্তার অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতার মতো একাধিক সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলা হয়। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার যাকে কর্টেক্স বলে তা পাতলা হয়ে যায় বা হ্রাস পায়। এই কর্টেক্স বৌদ্ধিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণা জানাচ্ছে ডিমনেশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্ক সময়ের সাথে ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়, ফলত মস্তিষ্কের আকার বা আয়তন বড়ো থাকলে তা বয়সজনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে সহায়তা করতে পারে। গবেষকদের মতে আকারে বড়ো মস্তিষ্ক, উন্নতমানের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যকে প্রতিফলিত করে। আর এর ফলে তা অ্যালজাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো বয়সজনিত কারণে মস্তিষ্কের রোগের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। অনেক স্নায়ুবিজ্ঞানী অবশ্য মনে করেন মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে আকার, সব নয়। তবে এটি বয়সের সাথে আসা অবনতির জন্য একটি ভালো বাফার রূপে কাজ করে। নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য যেমন উপকারী অন্যদিকে নিম্নমানের খাবার, অ্যালকোহল সেবন এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 4 =