
তানজানিয়ার ওল্ডুভাই গর্জে নতুন এক আবিষ্কারের আগে ওবদি বিজ্ঞানীরা মনে করতেন প্রাচীন হোমিনিনরা মাঝে মাঝে হাড়ের হাতিয়ার তৈরি করত। তবে এই গবেষণা প্রমাণ করে ১৫ লক্ষ্য বছর আগে থেকেই তারা নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে হাড়ের যন্ত্রপাতি তৈরি করত।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন,প্রাচীন মানুষের চিন্তাশক্তি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা সেই সময়ে অনেক উন্নত ছিল।
এই আবিষ্কার মানবজাতির ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। গবেষকরা আগে ভাবতেন আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা শুধু পাথরের হাতিয়ার তৈরি করত, হাড়ের হাতিয়ার তারা খুব একটা ব্যবহার করত না। কিন্তু ওল্ডুভাই গর্জের টি৬৯ খননস্থলে পাওয়া হাড়ের যন্ত্রপাতি প্রমাণ করে যে তারা নিয়মিতভাবে হাড়কেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। এই গবেষণা অনুসারে সময়ের সাথে সাথে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং মানসিক সক্ষমতা বাড়ছিল। তারা পাথর কাটার প্রযুক্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে হাড়ের সরঞ্জাম তৈরিতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম মানুষের পূর্বপুরুষদের তৈরি ও ব্যবহার করা হাতিয়ারের প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে পরিচিত হল ওল্ডোওয়ান সংস্কৃতি, যা ওল্ডুভাই গর্জে পাওয়া পাথরের সরঞ্জামের নামানুসারে পরিচিত। এটি প্রায় ২.৬ থেকে ১.৫ কোটি বছর আগের পুরোনো। এই প্রযুক্তিতে দুটি পাথর ঠুকে ধারালো টুকরা তৈরি করা হতো, যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।এরপর, ১ কোটি ৭ লক্ষ্য বছর আগে আরও উন্নত আকিউলিয়ান সংস্কৃতি শুরু হয়, যেখানে আরও ভালো মানের যন্ত্র তৈরি করা হতো। এই সংস্কৃতি প্রায় ১,৫০,০০০ বছর পর্যন্ত টিকে ছিল। আকিউলিয়ান প্রযুক্তি মূলত বড় ও শক্তিশালী হাতকুঠার তৈরি করার জন্য পরিচিত। এই হাতকুঠারগুলোর আকৃতি বাদামের মতো এবং এগুলো তৈরি করতে অনেক দক্ষতা লাগত। গবেষক ডে লা টোরে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ওল্ডোওয়ান থেকে আকিউলিয়ান প্রযুক্তির পরিবর্তন কেবল পাথরের হাতিয়ার দিয়েই বোঝা হতো। কিন্তু নতুন আবিষ্কার এই ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, আদিম মানুষ আফ্রিকান সাভানায় বন্য প্রাণীদের কখনো ভয় পেত, কখনো তাদের সাথে খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা করত, আবার কখনো তাদের খাদ্যের উৎস হিসেবে দেখত। বড় শিকারি প্রাণীরা মানুষকে শিকার করত, আর মানুষ হায়েনা ও শকুনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাংসের জন্য প্রাণীদের হাড় ভেঙে মজ্জা খেত।কিন্তু আকিউলিয়ান যুগে মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। গবেষক ডে লা টোরে বলেন, তখনকার মানুষ শুধু প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে দেখত না, বরং তাদের হাড় দিয়ে হাতিয়ার বানাতে শুরু করেছিল।গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে ওল্ডোয়ান ও প্রাথমিক আকিউলিয়ান যুগের মধ্যে পরিবর্তনের সময় পূর্ব আফ্রিকার মানুষেরা নতুন এক সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়েছিল। তারা পাথর কাটার কৌশল হাড়ের ওপরও প্রয়োগ করতে শিখেছিল। গবেষক ডে লা টোরে বলেছেন, আকিউলিয়ান যুগের মানুষেরা হাড় দিয়ে নির্দিষ্ট আকৃতির ও মানসম্মত সরঞ্জাম তৈরি করেছিল, যা আগে ভাবা হতো আরও ১০ লাখ বছর পরে এসেছে। এই নতুন উদ্ভাবন মানুষের চিন্তাশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়িয়ে তুলেছিল। এতে সরঞ্জাম তৈরি, সংরক্ষণ ও কাঁচামাল ব্যবহারের উন্নতি ঘটে। এই গবেষণা ৫ মার্চ ২০২৫ সালে
“পদ্ধতিগত হাড়ের সরঞ্জাম উৎপাদন ১.৫ মিলিয়ন বছর আগে” শিরোনামে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ।
ওল্ডোভাই গিরিখাত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্প পরিচালনা করছেন ইগনাসিও ডে লা টোরে ও জ্যাকসন এনজাউ । এই প্রকল্পে স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও তানজানিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা যুক্ত আছেন।