তাপপ্রবাহের প্রভাব ওষুধ ও রোগীর উপরেও

তাপপ্রবাহের প্রভাব ওষুধ ও রোগীর উপরেও

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২ আগষ্ট, ২০২৪
তাপপ্রবাহের-প্রভাব

এবছর গরমে উষ্ণতার পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সেই সঙ্গে ছিল তীব্র অস্বস্তি। দিনের বেলায় রাস্তায় পা রাখলেই ঝলসে যাচ্ছিল শরীর। বেশ কিছু জেলায় ছিল তাপপ্রবাহের সতর্কতা। অত্যধিক গরমে নাজেহাল ছিল কমবেশি সকলেই। অনেকেই আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল- ডায়েরিয়া, বমি, হজমের গোলমালে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে হানা দিয়েছে নানা ধরনের অসুস্থতা। তাপের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করতে চিকিৎসকেরা ব্যবহার করেছেন নানা ওষুধ। সেই ওষুধ তাপপ্রবাহের সময় কার্যকারি তো ছিলই সেইসাথে রোগীকে সুরক্ষিত রেখেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ আজকাল খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই তাপ প্রবাহের কারণে আমাদের ব্যবহৃত ওষুধে কী পরিবর্তন আসতে পারে? যে সব রোগীরা সেই ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের উপরে কী এর প্রভাব পড়তে পারে?
সাধারণ কারণে ব্যবহৃত ওষুধ উচ্চ তাপমাত্রায় শরীরের প্রতিক্রিয়াকে দুর্বল করে তোলে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘাম নিঃসরণ বা রক্ত প্রবাহকেও প্রভাবিত করে। ঘাম বাষ্পীভূত হলে, ত্বক থেকে তাপ অপসারণ হয়। শরীরে ঘাম না হলে তাপ বেড়ে যায়। অন্যদিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার সীমার মধ্যে না রাখা হলে তাপপ্রবাহ প্রায় সমস্ত ধরনের ওষুধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা সে ক্যাপসুলই হোক বা স্প্রে, অথবা ট্যাবলেট, সিরাপ বা অন্য কোনও ফর্ম। সেই সব ওষুধের প্রভাব রোগীর শরীরে পড়তে পারে, কিন্তু তা নির্ভর করে রোগীর স্বাস্থ্য, ওষুধের ডোজ এবং পরিবেশগত অবস্থার উপর। রোগীদের উচিত তাদের চিকিত্সকদের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া, এবং অতিরিক্ত গরমে নিজেদের হাইড্রেটেড রাখা অর্থাৎ বেশি পরিমাণে জল পান করা, পাখার তলায় বা ছায়ায় বা শীতল পরিবেশে নিজেদের শরীরকে ঠান্ডা রাখা। রক্তচাপ এবং হার্টের ওষুধ- অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটার তৃষ্ণার্ত হওয়া রোধ করে। তাই কখন শরীরে জলের প্রয়োজন তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে জলশূন্যতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার শরীরে খনিজ পদার্থের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে। আবার বিটা ব্লকার ঘাম হতে দেয় না তার ফলে শরীরকে ঠান্ডা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ডায়ুরেটিক বা যে সব ওষুধ শরীর থেকে অতিরিক্ত জল ও খনিজ মূত্রাকারে বের করে দেয় সে ওষুধও শরীরে জলশূন্যতা এবং খনিজ ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। অ্যালার্জির ওষুধ বা অ্যান্টিহিস্টামাইন ঘাম কমায় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কারণে খেতে হয় রোগীদের ঘাম হওয়া রোধ করে। কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের বিপরীত প্রভাব রয়েছে, ঘাম বাড়ায় এবং তৃষ্ণার অনুভূতি হ্রাস করে। থাইরয়েড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তবে, সাধারণভাবে, ওষুধ সূর্যের আলো থেকে দূরে শীতল, শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। নির্দিষ্ট ওষুধের জন্য তাপমাত্রা সংরক্ষণের নির্দেশিকা নির্মাতাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। প্রচন্ড তাপমাত্রায় কোন ওষুধের কতটা অবনতি হবে তা অনুমান করা কঠিন কারণ প্রতিটি ওষুধ আলাদা। তাই সতর্ক থাকতে হবে, শুধু ওষুধ কিনে সময়মতো খেলেই হবে না সেগুলো সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। এবং অবশ্যই তাপপ্রবাহের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 1 =