
বিজ্ঞানীরা একটি নতুন মিশ্রধাতু তৈরি করেছেন যা গরম বা ঠান্ডা করলে আকারে খুব একটা পরিবর্তিত হয় না। ধাতু সাধারণত গরম হলে বড় হয়। একে তাপীয় সম্প্রসারণ বলা হয়। আইফেল টাওয়ার এর একটি ভালো উদাহরণ। গ্রীষ্মকালে এটি শীতকালের তুলনায় লম্বা হয়। কিন্তু কখনও কখনও এই সম্প্রসারণ সমস্যা হতে পারে। তাই, বিজ্ঞানীরা এমন উপাদান খুঁজছেন যা তাপমাত্রার সাথে আকার পরিবর্তন করে না। এদের মধ্যে একটি হল ইনভার, যা লোহা এবং নিকেলের মিশ্র ধাতু। তাপমাত্রা পরিবর্তনেও ইনভার খুব কমই প্রসারিত বা সংকুচিত হয়।
ভিয়েনা এবং বেইজিংয়ের বিজ্ঞানীরা একসাথে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। তারা ইনভার কীভাবে কাজ করে বোঝার জন্য কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছিলেন।পরবর্তীতে গবেষকরা সেই জ্ঞান ব্যবহার করে পাইরোক্লোর চুম্বক নামক একটি নতুন ধাতু তৈরি করেছেন। এই নতুন উপাদানটি ৪০০ কেলভিনেরও বেশি তাপমাত্রার হেরফেরেও খুব বেশি আকার পরিবর্তন করে না। এটি ইনভারের চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি স্থিতিশীল।
কোনো পদার্থের তাপমাত্রা বাড়লে পরমাণুগুলোর চলাচল বৃদ্ধি পায়। তখন তাদের আরও জায়গা প্রয়োজন হয় ও তাদের গড় দুরত্ব বৃদ্ধি পায়। এই তাপীয় প্রসারণকে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে বিজ্ঞানীরা এমন একটি বিশেষ উপাদান তৈরি করতে পারেন যেখানে অন্য একটি পদার্থ ওই উপাদানটিকে কিছুটা সঙ্কুচিত করে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। সেগি খেমেলেভস্কি এবং তার দলএ বিষয়ে পরীক্ষার জন্য অতি-বিশদ কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেছেন। তারা আবিষ্কার করেছেন, ইনভার যত বেশি গরম হয়, ততই এর কিছু ইলেকট্রন তাদের আচরণ পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তন উপাদানটিকে কিছুটা সঙ্কুচিত করতে চায়। এই সঙ্কুচিত প্রভাব পদার্থটির প্রসারণে পুরোপুরি ভারসাম্য বজায় রাখে। অর্থাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের পরেও ইনভারের আকার প্রায় একই থাকে।
বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করার জন্য সের্গেই খমেলেভস্কি, বেইজিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিড স্টেট কেমিস্ট্রি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জিয়ানরান জিং এবং সহকারী অধ্যাপক ইলি কাও-এর পরীক্ষামূলক দলের সাথে একসাথে কাজ করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ পাইরোক্লোর চুম্বক পাওয়া গেছে।
আগের ইনভার মিশ্র ধাতুগুলিতে মাত্র দুটি ধাতু ব্যবহার করা হত।পাইরোক্লোর চুম্বকে থাকে চারটি উপাদান। যথা জিরকোনিয়াম, নিওবিয়াম, লোহা এবং কোবাল্ট।
পাইরোক্লোর চুম্বকের গঠন পুরোপুরি নিখুঁত নয়। এর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পরিমাণে কোবাল্টের মিশ্রণ থাকে। এই কারণে, উপাদানের দুটি অংশ তাপমাত্রার সাথে ভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু একসাথে, তারা ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই পুরো উপাদানটি গরম বা ঠান্ডা হলেও আকার একই থাকে।
এই উপাদানটি বিমান, মহাকাশযান, অথবা বিশেষ বিশেষ ইলেকট্রনিক জিনিসে সত্যিই কার্যকর হতে পারে। কারণ তাপমাত্রার বড় পরিবর্তনের পরেও এটি আকারে খুব বেশি বদলায় না।