তিন ভাগ জলে…

তিন ভাগ জলে…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ জুলাই, ২০২৪

তিন ভাগ জলে ভাসা পৃথিবীর, মানুষ। তার শরীরেও ৬০-৬৫% জলই থাকে। আরও আণবিক স্তরে দেখতে গেলে, মানুষের শরীরে, কোষের মতন পেশিও প্রায় জল দিয়ে গড়া – ৭০%। আগে যা জানা ছিল তাতে, পেশি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু ফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা বলছে, স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও পেশির গতি কত তাড়াতাড়ি হবে, তা নির্ভর করে পেশি তন্তুর মধ্যে কতটা জল চলাচল করছে, তার উপর। অর্থাৎ, আপনার শরীরের মোবিলিটি কত দ্রুত হতে পারে, তা নির্ভর করবে, আপনি পরিমিত মাত্রায় হাইড্রেটেড থাকছেন কিনা।
ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে ঘটে? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, পেশি সংকোচনে জলের ভূমিকার একটি তাত্ত্বিক মডেল তৈরি করেছেন। তারা বলছেন, পেশি তন্তুর আকার ত্রিমাত্রিক। পেশি তন্তু বিভিন্ন প্রোটিন, কোশের নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং মায়োসিনের মতো আণবিক মোটর দিয়ে গঠিত। এই আণবিক মোটর রাসায়নিক জ্বালানিকে, গতিতে রূপান্তরিত করে। পেশিকে সংকোচন করে। এই সমস্ত উপাদান একটি ছিদ্রযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে যা চারপাশে থাকা জলে ডুবে রয়েছে। একাধিক ছিদ্রযুক্ত একটা জল-ভরা স্পঞ্জের মতনই, পেশি-তন্তুর মধ্যে দিয়েই তরল চলাচল করে। এই তন্তু নিজে সক্রিয়ভাবে সংকুচিত হতে পারে। স্পঞ্জের মতই নিজেকে নিংড়ে কীভাবে জল চলাচল করবে, তা পরিচালন করতে পারে। আর এই জলের পরিমাণই নিয়ন্ত্রণ করে পেশির সংকোচন কত তাড়াতাড়ি হবে। পেশি, এক নতুন ধরনের ইলাস্টিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে। একে বলে অড ইলাস্টিসিটি। এই ইলাস্টিসিটি পেশিকে তার ত্রিমাত্রিক আকৃতি পরিবর্তনের শক্তি যোগায়। সুতরাং পেশির আকার পরিবর্তনে সাহায্য করছে অড ইলাস্টিসিটি আর পেশি সংকোচন এর শক্তি যোগাচ্ছে মায়োসিনের মতো আণবিক মোটর। একটি পেশি তন্তু দৈর্ঘ্যে কতটা সংকুচিত হবে, তার উপর নির্ভর করে শক্তির যোগান কতটা থাকবে। তবে গবেষকরা জানেন না যে, পেশির কার্যক্ষমতার পরিসীমা বা ঊর্ধ সীমা কতটা।
মানুষ বলে নয়, প্রায় সমস্ত প্রাণীরই নড়তে চড়তে এই পেশিকে ব্যবহার করে। অনেক ক্ষেত্রে এই পেশির গতি, তরল প্রবাহ নির্ধারণ করেনা। র‍্যাটলস্নেকের আওয়াজ আসলে তার লেজের পেশি সংকোচনের ফল। এই পেশি প্রতি সেকেন্ডে দশ থেকে একশবার সংকুচিত হতে পারে। আর এই সংকোচন সাধারণত পেশির তরল প্রবাহের পরিবর্তে, স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে ছোটো ছোটো প্রাণী যেমন উড়ন্ত পোকামাকড় যারা প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশো থেকে হাজার বার তাদের ডানা ঝাপটায়, তাদের এই দ্রুত সংকোচন নিউরনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এখানে আবার পেশির তরল প্রবাহই কাজ করে।