তিব্বতের নীচে ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট দুভাগে ভাঙছে

তিব্বতের নীচে ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট দুভাগে ভাঙছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জানুয়ারী, ২০২৪

হিমালয়, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত, কিন্তু এর সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ভূ-পৃষ্ঠের নীচের স্তরের অবদান। প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ার ভূত্বকের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে তিব্বত মালভূমি এবং বিশাল হিমালয় পর্বতমালা উত্তোলিত হয়। ইন্ডিয়ান প্লেটটি গলিত পাথরের স্রোতে প্রবাহিত হয়ে তার উত্তরদিকের টেকটোনিক প্লেটের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল, যার ফলস্বরূপ আমাদের বিশাল বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন কনফারেন্সে উপস্থাপিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের গবেষকরা দক্ষিণ তিব্বত জুড়ে সংগৃহীত নতুন সিসমিক ডেটার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে হিমালয়ের নীচে টাইটানিক প্লেটের এক বিশাল শক্তির কথা তুলে ধরেছেন। তারা ইন্ডিয়ান প্লেটের বিচ্ছিন্নতা বর্ণনা করেছেন কারণ এই প্লেট ক্রমে ক্রমে ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের বেসমেন্ট বরাবর পিষে যাচ্ছে আর এর ওপরে ইউরেশিয়ান প্লেট উঠে আছে।
বহু বছর আগে একটু একটু করে, ইউরেশীয় ভূমি ডুবন্ত ইন্ডিয়ান প্লেটের ওপরে আকাশের দিকে উত্তোলিত হয়েছে, যা আমাদের পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয় তৈরি করেছে। ম্যান্টেল ও ক্রাস্টের ঘনত্বের অধ্যয়ন থেকে মনে হয় ইন্ডিয়ান প্লেটের সহনশীলতার জন্য সহজে এই প্লেট পৃথিবীর গভীরে ম্যন্টেলে ডুবে যাবে না। সম্ভবত ক্রাস্টের নিমজ্জিত অংশগুলো ইউরেশিয়ান প্লেটের পেটের নীচে পিষে রয়েছে, ম্যান্টেলের গভীরতায় ডুবে যায় নি। অপর সম্ভাবনা হল ইন্ডিয়ান প্লেট এমনভাবে বিকৃত হচ্ছে যার ফলে কিছু অংশ কুঁচকে গেছে, ভাঁজ হয়ে গেছে এবং অন্য অংশগুলো ডুবে গেছে। ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে স্লাইড করার সাথে সাথে ইন্ডিয়ান প্লেটটি “ডিলামিনেটিং” হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অর্থাৎ ঘন নীচের অংশ উপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এই প্লেটের চাঙড়ের মতো অংশ ও খোসা ছাড়ানো অংশ এবং অক্ষত ইউরেশিয়ান প্লেটের সীমানায় ছিঁড়ে যাওয়ার প্রমাণও গবেষকরা পেয়েছেন।গবেষকদের মতে, মহাদেশগুলি এইভাবে আচরণ করতে পারে জানা ছিল না এতে পৃথিবীর বিজ্ঞান মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
গবেষকদের বর্ণনার সাথে ভূতাত্ত্বিক মডেল সামঞ্জস্যপূর্ণ যেখানে হিলিয়াম-3 সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক প্রস্রবণ এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি ফাটল ও ভূমিকম্পের নিদর্শনগুলির দেখায় পুরানো ইন্ডিয়ান প্লেটের অংশগুলি কমবেশি অক্ষত, আর এই প্লেটের ১০০ কিলোমিটার নীচে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যার নীচের অংশ খুলে পৃথিবীর গলিত অংশের সাথে মিলে যাচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লেটগুলির সীমা আর সীমাগুলোর স্পষ্ট ত্রিমাত্রিক বিবরণ থেকে পৃষ্ঠটি কীভাবে তৈরি হয়েছে তা বোঝা শুধু সহজ হচ্ছে না, ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও বোঝা যাবে।