
প্রাগৈতিহাসিক জিনতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদরা উত্তর গোলার্ধের প্রাণী ও উদ্ভিদের বিবর্তনের জীবাশ্ম ও ডি এন এ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে তুষারযুগে ঠান্ডা সহনশীল প্রাণীদের বিবর্তন ঘটেছিল। অর্থাৎ কিভাবে লোমশ ম্যামথ, কস্তুরী ষাঁড় ও আর্কটিক শেয়ালের মতো প্রাণীরা তুষারযুগে কঠোর ঠান্ডায় বেঁচে থাকার জন্য বিবর্তিত হয়েছিল। তাঁরা দেখিয়েছেন, প্রায় ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে, যখন পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে স্থায়ী বরফের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন প্রথমবারের মতো ঠান্ডা-সহনশীল প্রাণীদের বিবর্তন শুরু হয়। এরপর এমন একটি সময় আসে যখন মহাদেশীয় বরফের স্তর প্রসারিত ও সংকুচিত হতে থাকে। প্রায় ৭ লক্ষ বছর আগে এই ঠান্ডার সময়কাল দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই সময় থেকেই বর্তমানের অনেক ঠান্ডা সহনশীল প্রাণী, পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রাণী, যেমন লোমশ ম্যামথ, বিবর্তিত হতে শুরু করে।
গবেষক জন স্টুয়ার্ট ব্যাখ্যা করেছেন, “ঠান্ডা-সহনশীল প্রাণী ও উদ্ভিদ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অতীতের বিবর্তন বুঝতে পারলে আমরা আজ বিপন্ন প্রজাতিগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে পারি।“
গবেষণার সময়, গবেষকদলটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাথে উদ্ভিদ এবং গুবরে পোকার বিবর্তনের প্রমাণের তুলনা করে পরামর্শ দেন যে মেরু অঞ্চলে আগে কিছু জীবের বিবর্তনের ধারণা পরীক্ষা করা দরকার। এর অর্থ হ’ল আধুনিক আর্কটিক বাস্তুসংস্থানগুলি যেভাবে একত্রিত হয়েছিল সে প্রশ্নর সমাধান করা দরকার, কারণ সেখানে বসবাসকারী প্রাণী এবং উদ্ভিদগুলি কখন এবং কীভাবে একত্রিত হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।
গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, সত্যি লেমিংস/ছোট ইঁদুর ও বলগা হরিণ সম্ভবত প্রায় ১-২ মিলিয়ন বছর আগে আর্কটিক অঞ্চলে বিবর্তিত হয়েছিল। অন্যদিকে, মেরু ভালুক ও আর্কটিক শিয়াল তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ থেকে মাত্র ৭ লক্ষ বছর আগে উত্তর মেরু অঞ্চলে চলে আসে। আবার, কিছু প্রাণী, যেমন লোমশ গণ্ডার মূলত তিব্বতীয় মালভূমির তৃণভূমিতে বিবর্তিত হয়েছিল।
এটিই প্রথম গবেষণা যেখানে আধুনিক প্যালিয়োজেনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ঠান্ডা সহনশীল প্রাণী ও উদ্ভিদের বিবর্তনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আরও গভীরভাবে বোঝা যাবে কিভাবে আর্কটিক অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র গঠিত হয়েছিল এবং কিভাবে এই জ্ঞান সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে পারে।