ত্বকের ক্ষতস্থান মেরামতে ভিটামিন ‘এ’ -র ভূমিকা

ত্বকের ক্ষতস্থান মেরামতে ভিটামিন ‘এ’ -র ভূমিকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মার্চ, ২০২৪

আমাদের যখন কোথাও আঘাত লাগে কেটে ছড়ে যায়, তখন ত্বকের স্টেম কোশগুলো সেই ক্ষতস্থান মেরামতের কাজ শুরু করে, ক্ষত ঢেকে দিয়ে তারা নতুন এপিডার্মিস বা ত্বকের ওপরের স্তর তৈরি করে। রোমের ফলিকল স্টেম কোশ সাধারণত রোমের বৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু এই কোশ জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে, এপিডার্মাল স্টেম কোশগুলোকে রূপান্তরিত করে ত্বকের কাটা অংশ মেরামতের প্রচেষ্টা করে। রোমের ফলিকল স্টেম কোশগুলো প্রথমে একটি নমনীয় অবস্থায় প্রবেশ করে যেখানে তারা অস্থায়ীভাবে রোম এবং এপিডার্মিস উভয় ধরণের স্টেম কোশের ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর প্রকাশ করে। একবার স্টেম কোশগুলি এই অবস্থায় প্রবেশ করলে যা লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি নামে পরিচিত, তারা একটি নির্দিষ্ট দিক বেছে না নেওয়া পর্যন্ত উভয় ভূমিকায় কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার মূল নিয়ন্ত্রকদের শনাক্ত করতে গিয়ে ভিটামিন এ-এর জৈবিকভাবে সক্রিয় রূপ রেটনোয়িক অ্যাসিড পাওয়া গেছে, যা রিওস্ট্যাটের মতো কাজ করে।
ক্ষতস্থানের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়ায়, একাধিক টিস্যুতে লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি দেখা গেছে, ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়। কিন্তু ত্বকের ছোটখাটো আঘাতগুলো এই ক্রিয়া অধ্যয়ন করার সর্বোত্তম স্থান। যখন ত্বক ঘষে গিয়ে এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রোমের ফলিকল স্টেমকোশ প্রথম প্রতিক্রিয়া জানায়। গবেষকরা একটা ক্ষত অবস্থার অধীনে, ইঁদুরের হেয়ার ফলিকল স্টেম কোশগুলোতে লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি দেখার জন্য ছোটো অণুগুলো স্ক্রীন করেছেন। তারা দেখেছিলেন ভিটামিন A-এর জৈবিকভাবে সক্রিয় ফর্ম রেটিনোয়িক অ্যাসিড এই স্টেম কোশগুলোর লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয়। তারা জানিয়েছেন জিনগতভাবে, খাদ্য, বা বাইরে থেকে যোগ করে ইঁদুরের রেটিনোয়িক অ্যাসিড বাড়ানো বা অপসারণ করা যায়। এই রেটিনোয়িক অ্যাসিড স্টেম কোশগুলো ত্বকের আঘাতে বা চুলের পুনঃবৃদ্ধিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। রেটিনয়েডগুলো নিজে থেকে কাজ করে না, জিনের অভিব্যক্তি প্রকাশকারী বোন মরফোজেনেটিক প্রোটিন (BMP) এবং কোশীয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের সিগন্যালিং অণু WNT-এর সাথে প্রতিক্রিয়ায় স্টেম কোশগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকবে নাকি চুল পুনঃবৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হবে তা রেটিনয়েড প্রভাবিত করে। যখন লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় না, তখন এর থেকে ক্যান্সার হতে পারে। বেসাল সেল কার্সিনোমায় তুলনামূলকভাবে কম লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি থাকে এবং স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমার তুলনায় এরা কম আক্রমণাত্মক। যদি ভবিষ্যতের অধ্যয়নগুলি দেখায় যে লিনিয়েজ প্লাস্টিসিটি দমন করলে টিউমার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে, তাহলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেটিনয়েডের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − three =