ত্বকের নিজস্ব লিখনশৈলী

ত্বকের নিজস্ব লিখনশৈলী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুন, ২০২৫

প্রতিবার জলে ডুবে উঠলেই আঙুলে ফিরে আসে একইরকম বলিরেখা! এ এক নিখুঁত জৈব-যান্ত্রিক পূর্বনির্ধারিত অবস্থা। বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার গাই জার্মান, প্রথম এই রহস্যময় রেখার প্রতি আগ্রহী হন।আগে আমরা জানতাম জলের মধ্যে ত্বক ফুলে গিয়ে কুঁচকে যায়। কিন্তু একইরকম রেখা বারবার আসবে কেন? আসলে জলের সংস্পর্শে এলে আঙুলের নিচের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে ত্বককে ভিতরের দিকে টেনে নেয়। এই টানই জন্ম দেয় বলিরেখার। এ যেন ত্বকের নিজস্ব এক লিখনশৈলী। “আমি তখন ‘দ্য কনভার্সেশন’-এর ‘কৌতূহলী বাচ্চা ’ ফিচারের জন্য লিখছিলাম। একটি শিশু জিজ্ঞেস করে‘এই রেখাগুলো কি প্রতিবার একরকম হয়?’ আমি থমকে গেলাম। উত্তর জানতাম না। তখনই বুঝলাম, নতুন একটা গবেষণার দরজা খুলে গেছে।” জানান গাই। এরপর তিনি ও তাঁর ছাত্রী র‍্যাচেল লেটিন একটি সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা চালান। তারা স্বেচ্ছাসেবীদের ৩০ মিনিটের জন্য নিজেদের আঙুল জলে ডুবিয়ে রাখতে বলেন এবং ছবির মাধ্যমে রেখাগুলির পরিবর্তন নথিভূক্ত করতে থাকেন। এর ২৪ ঘণ্টা পর, আবার একইভাবে তাদের আঙুলগুলিকে নিমজ্জন করতে অনুরোধ করা হয়। আবারও সেগুলির ছবি ধরা হয়। ফলাফল? দুই ছবিতে দেখা গেল অভিন্ন বলিরেখার ধাঁচ! প্রায় নিখুঁত পুনরাবৃত্তি। “রক্তনালীগুলোর সামান্য ঘোরাফেরা হয় ঠিকই, কিন্তু মোটামুটি তারা এক জায়গাতেই থাকে,” গাই জানান। সেই অনড়তা জন্ম দেয় একই ধরনের রেখা-যেমনটা ছিল গতকাল, তেমনি আজও। কিন্তু গল্পে নতুন মোড় আসে যখন গাইয়ের এক ছাত্র জানায় তার আঙুলে স্নায়ুর ক্ষতি হয়েছে। তার ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভিন্ন ফল দেখা গেল। তার আঙুল জলে ডুবানো সত্ত্বেও কোনো বলিরেখা তৈরি হলো না। সোজা ভাষায় এই পুরো প্রক্রিয়াটি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা চালিত। জলে ডোবা মৃতদেহের আঙুলের রেখা শনাক্ত করার জন্য এই জ্ঞান হতে পারে এক মূল্যবান হাতিয়ার। গাইয়ের বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মী। তার কাছ থেকেই তিনি শোনেন, জল থেকে পাওয়া দেহের শনাক্তকরণ কতটা কঠিন হতে পারে। তাই, গাই জার্মানের কাছে এখন জলের মতন স্পষ্ট যে বলিরেখাও হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা চালাবার পরিকল্পনা রয়েছে গাইয়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − seven =