দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে পেঙ্গুইন মহামারী

দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে পেঙ্গুইন মহামারী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে খাদ্য সংকটের কারণে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে আফ্রিকান পেঙ্গুইন প্রজাতি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শুধু ড্যাসেন ও রবেন দ্বীপে ৬০,০০০-এরও বেশি আফ্রিকান পেঙ্গুইন অনাহারে মারা গেছে। সার্ডিন মাছের আধার ধসে পড়াই এই মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে গবেষকদের মত।

আফ্রিকান পেঙ্গুইন বছরে একবার তিন সপ্তাহের জন্য মোল্টিং বা পালক বদলের সময় ডাঙায় থাকে, এসময় তারা খাবার খেতে পারে না। তাই এই সময়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর চর্বি সঞ্চয় করে রাখতে হয়। কিন্তু তাদের প্রধান খাদ্য সার্ডিন অপ্রতুল হওয়ায় অনেক পেঙ্গুইন পর্যাপ্ত পুষ্টি অর্জন করতে পারেনি। ফলস্বরূপ তারা পালক বদলের সময় না খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে বলে গবেষকদের ধারণা।

ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশনের ড. রিচার্ড শার্লে বলেন, পেঙ্গুইনরা স্বভাবগতভাবে শরীরে চর্বি জমিয়ে পরে সেই শক্তি দিয়ে পালক বদলের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু খাদ্য সংকটের কারণে অনেক পাখি পালক বদলের আগে বা পরে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে পারছে না। তারা সাধারণত সমুদ্রে মারা যায়, তাই ব্যাপক পরিমাণে লাশ পাওয়া যায় না।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এই আট বছরে সার্ডিনের মজুত দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ২৫ শতাংশের নীচে নেমে যায় এবং দীর্ঘদিন সেই অবস্থায় থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মাছ ধরাই সার্ডিনের এই পতনের প্রধান কারণ।

আফ্রিকান পেঙ্গুইন আফ্রিকা মহাদেশের একমাত্র স্বদেশি পেঙ্গুইন প্রজাতি। গত তিন দশকে এই প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে এবং গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, আসন্ন এক দশকের মধ্যেই এরা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

প্রজাতিটিকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। নকল পেঙ্গুইন বা ‘ডিকয়’ এবং পেঙ্গুইনের রেকর্ড করা ডাক ব্যবহার করে নিরাপদ, খাদ্যসমৃদ্ধ এলাকায় নতুন বসতি গড়ে তুলতে পেঙ্গুইনদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এতে তারা মানুষের উপস্থিতি কম এমন এলাকায় বসতি গড়ে তুলতে উৎসাহিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে আফ্রিকান পেঙ্গুইনকে রক্ষা করতে হলে সার্ডিনের মজুত পুনরুদ্ধার করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২৪ সালে প্রজাতিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অতি গুরুতরভাবে বিপন্ন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে।

 

সূত্র : More than 60,000 penguins starve to death near Africa after fall in sardine numbers, published in Ostrich: Journal of African Ornithology, Friday 05 December 2025 11:34 GMT.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 6 =