বেঙ্গালুরুর ইনস্টিটিউট ফর স্টেম সেল সায়েন্স অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন (ইনস্টেম)-এর গবেষকরা দক্ষিণ ভারতের জনগোষ্ঠীর ওপর এক বিস্তৃত জেনোমিক গবেষণা চালিয়ে এমন কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পেয়েছেন, যা তাদের হৃদরোগ, বিশেষত হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এইচ সি এম)–এর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। এই বিরল ও গুরুতর অবস্থা হৃদযন্ত্রের পেশি অস্বাভাবিকভাবে পুরু করে ফেলে, যা সময়মতো শনাক্ত না হলে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া কিংবা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে–এ। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত ৩৩৫ জন নিশ্চিত এইচ সি এম রোগীর জিনোম বিশ্লেষণ করে গবেষকরা পেয়েছেন হাজার হাজার ক্ষতিকর জিনগত আকস্মিক পরিবর্তন, যার অনেকগুলোই পশ্চিমা দেশের রোগীদের জিন প্যাটার্নের তুলনায় একেবারেই আলাদা। অর্থাৎ, ভারতীয়দের হৃদরোগের জেনেটিক গঠন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাখ্যা করা যায় না—এটির নিজস্ব এক স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, আগে ভারতীয় রোগীদের মধ্যে সাধারণত যেসব জিনে (যেমন – MYBPC3 ও MYH7) আকস্মিক পরিবর্তন বেশি দেখা যায় বলে ধারণা ছিল, সেখানে তুলনামূলকভাবে কম পরিবর্তন ধরা পড়েছে। বরং নতুন আলো পড়েছে MYH6 নামে এক জিনে, যেটি আগে খুব বেশি নজর কাড়েনি। এখানেই গবেষকরা পেয়েছেন বহু অচেনা ও সম্ভবত উচ্চঝুঁকিপূর্ণ রূপভেদ। এতে স্পষ্ট যে দক্ষিণ ভারতের মানুষের হৃদরোগের জিনগত ভিত্তি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর হৃদরোগের জেনেটিক কাঠামো স্বতন্ত্র।
ফলে দক্ষিণ ভারতীয় জনগোষ্ঠীর হৃদরোগ ঝুঁকি বিশ্লেষণে নতুন করে ভাবতে হবে, বদলাতে হবে চিকিৎসার কৌশলও। এই জিনগত বৈশিষ্ট্য শনাক্ত হওয়ায় এখন আরও নির্ভুলভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে কে কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন। বিশেষত তরুণদের আকস্মিক হৃদবৈকল্য প্রতিরোধে উন্নত স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম তৈরি করা যাবে। দক্ষিণ ভারতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা ডায়াগনস্টিক টেস্ট ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসাপদ্ধতি—দুটোরই প্রয়োজনীয়তা এখন আরও স্পষ্ট।
গবেষণার সহ–লেখক ড. পেরুন্দুরাই এস. ধনদাপানি মনে করেন, এই ফলাফল ভারতের জেনেটিক হৃদরোগ গবেষণায় “এক নতুন যুগের সূচনা”। তাঁর মতে, ভারতীয়দের জিনগত বৈশিষ্ট্য আন্তর্জাতিক রোগ–তালিকার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না—তাই আমাদের নিজস্ব গবেষণা, নিজস্ব স্ক্রিনিং মডেল তৈরি করা জরুরি।
অর্থাৎ, এই নতুন আবিষ্কার শুধু একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয় , এটি ভারতের হৃদরোগ–বিষয়ক চিকিৎসাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে—যেখানে সাধারণ চিত্রের বাইরে গিয়ে জনগোষ্ঠী–নির্ভর জেনেটিক বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সূত্র : South Indians more prone to heart disease: Study by Ashwin BM, 1st December, 2025 04:52 IST.
https://www.deccanherald.com/india/south-indians-more-prone-to-heart-disease-study-3815339
