দক্ষিণ ভারতের হাতিদের কম জেনেটিক বৈচিত্র্য তাদের ঝুঁকির কারণ

দক্ষিণ ভারতের হাতিদের কম জেনেটিক বৈচিত্র্য তাদের ঝুঁকির কারণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

 

ভারত প্রায় ২৯০০০ হাতির আবাসস্থল, কিন্তু সেই হাতিদের মধ্যে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস) এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি) এর গবেষকরা দেখেছেন ভারতীয় হাতিরা হাজার হাজার বছর যাবত ভারতের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণের দিকে অভিবাসিত হয়েছে আর তার সাথে ধীরে ধীরে তাদের জিনগত বৈচিত্র্য হারিয়েছে। কারেন্ট বায়োলজি-তে প্রকাশিত গবেষণায় ভারত জুড়ে সংগৃহীত বন্দী এবং বন্য হাতির জিনোম সিকোয়েন্স করে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। হাতিদের রক্তের নমুনা থেকে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে হাতিদের পাঁচটা জিনগতভাবে স্বতন্ত্র জনসংখ্যায় বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ধরনের হাতি পাওয়া গেছে যারা হিমালয়ের পাদদেশে উত্তর-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব জুড়ে বিস্তৃত, অপরদলের হাতিরা মধ্য ভারতে থাকে। আর বাকি তিনটে হাতির দল ভারতের দক্ষিণ দিকে থাকে। ২০১৭-তে করা ন্যাশানাল সেনসাস অনুসারে দক্ষিণ ভারতের হাতিদের সংখ্যা ১৪৫০০, মধ্য ভারতে ৩০০০-এর বেশি হাতি দেখা যায়। উত্তরভারতে ১২০০০ হাতির মধ্যে উত্তরপশ্চিমে ২০০০ হাতি পাওয়া যায়। আর উত্তরপূর্বে হাতির সংখ্যা ১০০০০। এদের মধ্যে উত্তর ভারতের এই ১২০০০ হাতি বাকি ভারতীয় হাতিদের থেকে ৭০০০০ বছর আগেই জেনেটিকভাবে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
তামিলনাড়ু এবং কেরালাকে সংযুক্তকারী শেনকোটাহ গ্যাপের দক্ষিণে পাওয়া যাওয়া হাতি গোষ্ঠীর জিনগত বৈচিত্র্য সবচেয়ে কম। গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুসারে, দক্ষিণ হাতিদের জেনেটিক বৈচিত্র কম হওয়ার কারণ সম্ভবত একটা জনসংখ্যা থেকে অল্প সংখ্যক হাতি বেড়িয়ে গিয়ে নতুন জনসংখ্যা প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এই প্রচেষ্টা হাতিদের মধ্যে চলতেই থেকেছে। এই জনসংখ্যা যত ছোটো হয়ে যায়, অন্তঃপ্রজননের সম্ভাবনা বাড়ে। আর তাতে ক্ষতিকারক জেনেটিক বৈচিত্রগুলো সম্পর্কিত হাতিদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের জনসংখ্যা চিহ্নিত করে সংরক্ষণ কৌশল নেওয়া প্রয়োজন। সমীক্ষায় দেখা গেছে তামিলনাড়ু এবং কেরালার সাথে সংযোগকারী শেনকোটাহ গ্যাপের দক্ষিণে ১৫০ টা হাতির ছোটো বিচ্ছিন্ন জনসংখ্যা বিলুপ্তির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতি ধরনের হাতিদের নিজেদের মধ্যে সংযোগ চলে যাওয়ার কারণ কোথাও পালঘাটের মতো পাহাড় বা গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীর অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানো। বর্তমানে নানা ধরনেরমনুষ্যসৃষ্ট পরিকাঠামো হাতিদের যাতায়াতের পথে বাধার সৃষ্টি করছে। আবাসস্থলের সংযোগ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে, অধ্যাপিকা উমা রামকৃষ্ণান উল্লেখ করেছেন যে সাম্প্রতিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন পশ্চিমঘাটের তিনটে জনগোষ্ঠীর মধ্যে জিন প্রবাহকে আরও কমিয়ে দিতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, এই পাঁচটা জিনগতভাবে স্বতন্ত্র হাতির জনসংখ্যার শনাক্তকরণ অঞ্চল-ভিত্তিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। তিনি বলেন, গবেষকরা হাতির মল থেকে নির্গত ডিএনএর ওপর ভিত্তি করে একটা জেনেটিক টুলকিট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছেন, যাতে হাতির জনসংখ্যার মধ্যে পৃথকভাবে হাতিদের সঠিকভাবে নিরীক্ষণ করা যায়।