দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায় ব্যাকটেরিয়া 

দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায় ব্যাকটেরিয়া 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

আমাদের মুখে থাকা ক্ষুদ্র জীবদের জটিল জগৎ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যত গভীরে অনুসন্ধান করছেন, ততই পরিষ্কার হচ্ছে, সব ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক নয়। বরং অনেক ব্যাকটেরিয়া দাঁত, মাড়ি এমনকি গোটা শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সদর্থক ভূমিকা পালন করে। তাই প্রশ্ন উঠছে, সব ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলাই কি আসল সমাধান, নাকি তাদের আচরণ বদলানোই ভালো হবে? এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষকরা একটি নতুন পথ খুঁজেছেন। তাঁরা দেখেন, মুখের ব্যাকটেরিয়া যে রাসায়নিক বার্তা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে, সেটি ব্যাহত হলে দাঁতের প্লাক (দাঁতের উপরে জমে থাকা ময়লার স্তর ) এবং মাড়ির রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।

আমাদের মুখের মধ্যে প্রায় শতাধিক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে। তারা আলাদা আলাদাভাবে নয়, বরং একটি সংগঠিত সমাজ হিসেবেই কাজ করে। এই সমন্বয়ের জন্য তারা রাসায়নিক বার্তা বিনিময় করে, যাকে বলা হয়, যৌথ সংকেত বোঝাপড়া। গবেষণার কেন্দ্রীয় উপাদান ছিল একটি বিশেষ ধরনের সংকেত প্রেরক অণু। এন-অ্যাসাইল হোমোসে (AHLs)। এগুলি ব্যাকটেরিয়ার জন্য নির্দেশকের মতো কাজ করে। কখন সংখ্যায় বাড়তে হবে, কখন প্লাক তৈরি করতে হবে, কখন ক্ষতিকর গোষ্ঠীতে রূপ নিতে হবে- এসবেরই নির্দেশ দেয় তারা। গবেষকরা দেখেন, মাড়ির উপরের অংশে, যেখানে অক্সিজেন বেশি, সেখানকার ব্যাকটেরিয়া বেশি AHLs তৈরি করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সংকেত কম অক্সিজেনযুক্ত গভীর অংশেও পৌঁছে যায়। গবেষকরা যখন ল্যাকটোন্যাজ নামক বিশেষ উৎসেচক ব্যবহার করে এই সংকেতগুলি নষ্ট করেন তখন ব্যাকটেরিয়ার গোষ্ঠীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।

উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর্বল হয়ে যায়। তাঁদের মতে, হয়তো এভাবেই একদিন দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব হবে – কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই। প্রধান গবেষক মাইকেল এলিয়াস বলেন, “ডেন্টাল প্লাক তৈরি হয় ধাপে ধাপে। ঠিক যেমন বনে গাছপালার ক্রমবিকাশ ঘটে।” প্রথমে থাকে স্ট্রেপটোকক্কাস বা অ্যাকটিনোমাইসিস -এর মতো সহজ ও নিরীহ প্রজাতি । এগুলি সুস্থ মুখের বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক বাসিন্দা। পরবর্তীতে আসে দেরীতে বসতি গঠনকারী জীবাণু যাদের মধ্যে রয়েছে কুখ্যাত ব্যাকটেরিয়া পর্ফাইরোমোনাস জিঞ্জিভ্যালিস। এই প্রজাতিগুলিই মূলত মাড়ির স্থায়ী সংক্রমন ঘটায়। এলিয়াসের মতে,“যদি আমরা ব্যাকটেরিয়ার সংকেত বন্ধ করতে পারি, তাহলে হয়তো প্লাককে সেই স্বাস্থ্যকর অবস্থাতেই আটকে রাখতে পারবো।” দাঁতের রোগ রোধের ভবিষ্যৎ হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বরং ব্যাকটেরিয়ার আচরণ নিয়ন্ত্রণ। যদি এই কৌশল সফল হয়, তবে শুধু দাঁতের যত্ন নয়, শরীরের অন্যান্য রোগ, এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এটি নতুন চিকিৎসার পথ তৈরি করে দেবে।

 

সূত্র : “N-acyl homoserine lactone signaling modulates bacterial community associated with human dental plaque” by Rakesh Sikdar, Mai V. Beauclaire, Mark C. Herzberg, Bruno P. Lima and Mikael H. Elias, 17 November 2025, npj Biofilms and Microbiomes.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 2 =