আমরা এ ব্যাপারে মোটামুটি ওয়াকিবহাল যে প্রাচীন শিলায়, জলের বোতলে, এমনকি মানুষের নানা অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। যেভাবে নানা উৎস থেকে যতটা মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংস্পর্শে আমরা আসছি, তা বেশ উদ্বেগজনক। স্পেনের বার্সেলোনার অটোনমাস ইউনিভার্সিটি জানাচ্ছে, গরম জলে ডুবিয়ে তৎক্ষণাৎ চা বানানোর একটা টি-ব্যাগ জলে ডোবালেই কয়েকশো কোটি মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানোপ্লাস্টিক (এম এম পি এল) মুক্ত করে। এ বিষয়ে চমকানোর কিছু নেই, আগেও গবেষণায় জানানো হয়েছিল, বেশি তাপমাত্রায় প্লাস্টিক থেকে সহজেই মাইক্রোপ্লাস্টিক বেরিয়ে আসে। যেমন মাইক্রোওয়েভে প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গরম করতে গেলে, প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক মুক্ত হয়। চা ব্যাগ থেকে কৃত্রিম কণার পরিমাণ এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের প্রভাব জানতে গবেষকরা বাজারে বিক্রীত নানা ধরনের টি-ব্যাগ নিয়ে চায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করেছিলেন।
লেজারের সাহায্যে টি- ব্যাগ থেকে নির্গত কণার আলোর গতি ও বিচ্ছুরণ পরিমাপ করে এই কণাগুলোর রাসায়নিক ও ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলোর সঠিক চিত্র পাওয়া গেছে। তিন ধরনের টি ব্যাগ, পলিপ্রোপিলিন, সেলুলোজ ও নাইলন ব্যাগ পরীক্ষা করা হয়। যে ব্যাগ পলিপ্রোপিলিন থেকে তৈরি তার প্রতি মিলিলিটারে প্রায় ১২০ কোটি কণা নির্গত হয়, যার গড় আকার ১৩৬.৭ ন্যানোমিটার। সেলুলোজ ব্যাগ থেকে প্রতি মিলিলিটারে গড়ে ১৩.৫ কোটি কণা নির্গত হয়, যা আকারে প্রায় ২৪৪ ন্যানোমিটার। নাইলন-৬ টিব্যাগ থেকে সাধারণত প্রতি মিলিলিটারে ৮১.৮ লক্ষ কণা মুক্ত হয় যাদের গড় আকার ১৩৮.৪ ন্যানোমিটার।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন এম এন পি এল কণাগুলো মানুষের অন্ত্রের কোশের সাথে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে। তাঁরা দেখেন, অন্ত্রের শ্লেষ্মা-উৎপাদনকারী কোশগুলোতে প্লাস্টিক এমনভাবে শোষিত হয় যে তা কোশের নিউক্লিয়াসে পৌঁছে যায়। এম এন পি এল-এর পলিমারের উপাদান, জৈবিক মিথস্ক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে, যার ফলে অঙ্গ, কলা এবং কোশের ওপর নানা প্রভাব পড়ে। এর ফলে নির্দিষ্টভাবে সঞ্চয়ের ধরন, বিষাক্ততা, অনাক্রম্যতার প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদীভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে, এতে জিনস্তরে পরিবর্তন, ক্যানসার হতে পারে। গবেষকরা জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খাদ্য প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার মানসম্মত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হল ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি বাস্তুতন্ত্র এবং আমাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। শরীরে প্লাস্টিকের উপস্থিতির জন্য সংক্রমণ হতে পারে, অন্ত্রে প্লাস্টিকের উপস্থিতিতে প্রদাহ হয়ে ইনফ্ল্যামাটারি বাওয়েল ডিজিজ (আই বি এস) হতে পারে। এই গবেষণা কেমোস্ফিয়ারে প্রকাশিত হয়েছে।