দিবাস্বপ্ন দেখা কতটা জরুরি

দিবাস্বপ্ন দেখা কতটা জরুরি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

‘দিবাস্বপ্ন দেখা’-র খারাপ দিকের থেকে ভালো দিক বেশি রয়েছে এমনটাই দেখছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা যারা ঘটনাটি অধ্যয়ন করছেন। বর্তমানে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন যে যখন ইঁদুর ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখে বা আগে দেখা কোনো জিনিসের প্রতিফলন দেখে, তাদের মস্তিষ্কে স্মৃতি এবং শিখনের সংযোগের পুনর্নির্মাণ হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি গবেষণার প্রয়োজন তবে মনে হচ্ছে যখন ইঁদুরকে একটি কালো-সাদার চৌকো চৌকো প্যাটার্ন দেখানো হয়, তাদের দৃষ্টির আড়ালে সেটা সরিয়ে নেওয়ার পরও মনের চোখে তারা চিত্রটি কল্পনা করতে পারে। ইঁদুরের মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে যখন কোনো চিত্র ফুটে ওঠে তখন বলা যায় যে ইঁদুরটি দিবাস্বপ্ন দেখছে এবং সেই সময় ইঁদুর শান্ত, নিরুদ্বেগ অবস্থায় থাকে। হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই শান্ত, স্বপ্নময় অবস্থা যা ঘুমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, স্মৃতিকে একত্রিত করে এবং শিখন উন্নীত করে।
১৩টি ইঁদুর নিয়ে করা এই গবেষণায় শান্ত নিরুদ্বেগ পরিবেশে ইঁদুরদের দুই সেকেন্ডের জন্য সারা দিনে ৬৪ বার দুটি ভিন্ন কালো-সাদা ছবি দেখানো হয়েছিল। গবেষকের দল আটটি ইঁদুরের মস্তিষ্কে ৭০০০ নিউরনের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ ও মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এবং হিপ্পোক্যাম্পাসের স্নায়ু কোশ পর্যবেক্ষণ করেছেন। সব শেষে দেখা গেছে দুটি চিত্রের প্রতিটি ইঁদুরের পার্শ্বীয় ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে স্নায়বিক কার্যকলাপের একটি ভিন্ন প্যাটার্নকে ট্রিগার করেছে। মস্তিষ্কের এই অংশটি বস্তুর চিহ্নিতকরণ এবং আকারের বৈশিষ্ট্য বোঝার সাথে সম্পর্কিত। এটা স্পষ্ট যে ইঁদুরের মস্তিষ্ক প্রতিটি চিত্রকে স্নায়বিক কার্যকলাপের একটি ভিন্ন প্যাটার্নের সাথে এনকোড করছে। সময়ের সাথে সাথে, একটি চিত্র দেখে মস্তিষ্কে যে ক্রিয়াকলাপ হয় তা সেই চিত্রটি সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখার সময় মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের অনুরূপ হতে শুরু করে। অর্থাৎ দিবাস্বপ্ন দেখা কিছু নিউরোনাল সংযোগকে শক্তিশালী করে অন্যান্য সংযোগ দুর্বল করে তোলে ও সামগ্রিকভাবে আরও কার্যকর উদ্দীপনা প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন যে যখন কেউ অনেকবার দুটি ভিন্ন চিত্র দেখে, তখন তাদের মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই গবেষণা জানায় যে দিবাস্বপ্ন এই প্রক্রিয়াটিকে পরিচালনা করতে পারে। যখন মস্তিষ্ক উদ্দীপিত অবস্থায় থাকে না বা শান্ত থাকে, তখন এটি একটি কাল্পনিক জগতে চলে যেতে পারে, যেখানে মানসিক চিত্রের সাহায্যে কোনো উদ্দীপনার কারণে মস্তিষ্কের ভবিষ্যত প্রতিক্রিয়া সক্রিয়ভাবে পুনর্গঠিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা তা অজানা, তবে পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে কোনো চিত্র স্মরণ করতে বললে মানুষের ক্ষেত্রেও তাদের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এবং হিপ্পোক্যাম্পাসে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশি দিবাস্বপ্ন দেখেন তারা যে কোনো বিভ্রান্তিকর পরিবেশে স্মৃতি স্মরণ করতে সক্ষম। হার্ভার্ডের নিউরোবায়োলজিস্ট মার্ক অ্যান্ডারম্যান যুক্তি দেন যে এই ধরনের দিবাস্বপ্নের ঘটনা মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বা মস্তিষ্কের যে স্নায়বীয় সংযোগ বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয় তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে খুব বেশি দিবাস্বপ্ন দেখা বা ভুল জিনিস সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখা মানুষের বুদ্ধিমত্তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন মনোযোগ এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 10 =