দীর্ঘজীবন মানেই ধীর বার্ধক্য নয়  

দীর্ঘজীবন মানেই ধীর বার্ধক্য নয়  

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫

আজকের বিজ্ঞানজগৎ বার্ধক্য থামাতে বদ্ধ পরিকর। কেউ খুঁজছেন জৈবিক বয়স কমানোর সূত্র, কেউ প্রস্তাব দিচ্ছেন বার্ধক্য উল্টে দেওয়ার ওষুধ তৈরির। কিন্তু এরই মাঝে এক বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আলোচনার কেন্দ্রে এসে বলছে—এই উত্তেজনার অনেকটাই আসলে ভুল বোঝাবুঝির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কারণ আমরা যে উপায়ে বার্ধক্য মাপি, সেগুলো অনেক সময় প্রকৃত বার্ধক্যের গতিকে নয়, বরং নির্দিষ্ট রোগের ওঠানামাকে ধরে।

এই সমীক্ষা করেন বার্ধক্য-জীববিজ্ঞানী ড. ড্যান এহনিঙ্গার ও ড. মরিয়ম কেশাভার্জ। তাঁদের বিশ্লেষণ বলছে, বার্ধক্যর গতি ধীর হচ্ছে এমন বহু দাবির তলায় রয়েছে এক মৌলিক ভুল। একটি নির্দিষ্ট রোগ কমে যাওয়াকে তারা ধরে নিচ্ছে বার্ধক্যের গতি কমে যাওয়া। অথচ এই দুই ঘটনা এক নয়, বরং সম্পূর্ণ আলাদা জৈবিক প্রক্রিয়া।

মানবদেহের বার্ধক্য থেমে আছে—এমন ধারণাকে এ গবেষণা প্রথমেই চ্যালেঞ্জ করছে। মানুষের ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়সের মৃত্যু বেশিরভাগই ঘটে হৃদরোগ থেকে। শতবর্ষী সুস্থ ব্যক্তিরাও শেষ পর্যন্ত মারা যান কোনো নির্দিষ্ট রোগে,স্বাভাবিক বার্ধক্যে নয়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে চিত্রটা আরও স্পষ্ট—ইঁদুরের মৃত্যুর প্রায় ৮৫% ক্যানসারে, কুকুরদের অর্ধেক মৃত্যুর পেছনে টিউমার। অর্থাৎ নির্দিষ্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে আনলে আয়ু বাড়া স্বাভাবিক, কিন্তু শরীরের বার্ধক্যের ঘড়ির কাঁটা তাতে উল্টো পথে দৌড়ায় কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

গত দুই শতকে মানবজীবনের গড় আয়ু যে বেড়েছে তা মূলত টিকাদান, উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের ফল। গবেষকদের মতে, মানুষ দীর্ঘজীবন ধীর বার্ধক্যের চিহ্ন নয়, – মৃত্যুর ধরণ পাল্টে যাওয়ার প্রভাবস্বরূপ একটু দেরিতে দরজায় কড়া নাড়ার চিহ্ন ।

ডিএনএ-মিথাইলেশনের ভিত্তিতে বয়স-মাপার জৈবিক ঘড়িগুলো আজ জনপ্রিয়। কিন্তু এগুলো মূলত সহ-সম্পর্ক ভিত্তিক, কারণ-নির্ভর নয়। অনেক সময় ঘড়িতে কম বয়স দেখানো মানে বার্ধক্যের হার কমা নয়—শুধু কোনো জৈব নির্দেশকের সাময়িক পরিবর্তন।

সমীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—বার্ধক্য একটি বহুস্তরীয়, প্রজাতি-নির্ভর, টিস্যু-নির্ভর প্রক্রিয়া। তাই আয়ু বাড়লেই বার্ধক্য ধীরগতি হয়েছে—এ ধারণা বৈজ্ঞানিকভাবে দুর্বল। বার্ধক্য থামানোর সত্যিকারের উত্তর পেতে হলে বার্ধক্য পরিমাপের আরও সুনির্দিষ্ট, কারণভিত্তিক উপকরণ তৈরি জরুরি।

 

সূত্র: Genomic Psychiatry (August 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =