দুই সহস্রাবদের মধ্যে উষ্ণতম ছিল ২০২৩

দুই সহস্রাবদের মধ্যে উষ্ণতম ছিল ২০২৩

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ মে, ২০২৪

গাছের গুঁড়ির মধ্যে যে বার্ষিক রিং হয় তা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে রঙ বদলায়। তা দিয়ে গাছের বয়স মাপার রীতি বহুদিনের। প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে ওঠা গাছের গুঁড়ি যে প্রকৃতির জলবায়ু পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতির হিসাব দেয়, সে তথ্যটি বিজ্ঞানীদের কাছে বহুদিন ছিল। কিন্তু থার্মোমিটারের পরিবর্ত হিসাবে গাছের বার্ষিক রিং-এর মারপ্যাঁচ ও বিন্যাশকে ব্যবহার করে পৃথিবীর উষ্ণায়নের গতিপ্রকৃতি মাপা যায় সুনির্দিষ্টভাবে, এ কেরামতি আগে কখনো কেউ দেখাতে পারেননি। যেমনটা করেছেন জার্মানির মেইনজ-এর জোহানেস গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক জান এস্পার ও তার সহকর্মীরা। ১৪ই মে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক দুরন্ত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গাছের রিং-এর পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত চোখ মেলে খুঁজে পেয়েছেন যে তথ্য, তাতে শঙ্কা জাগে।

২০২৩ সালের গ্রীষ্ম ছিল গত দুহাজার বছরের মধ্যে উষ্ণতম। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ যে ২০২৪ সালটা আরও তেতে পুড়তে যাচ্ছে। এর মধ্যেই আমরা অবশ্য এ বাংলাতেও তা টের পেয়েছি। সহস্রাবদের আগুন আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তার রূপরেখা টানার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। জীবাশ্ম দহনে উঠে আসা খুব বেশি গ্রীনহাউস গ্যাস ইদানিং পৃথিবীকে তাতিয়ে তুলছে। এর সাথে জুড়েছে ‘এল নিনো’। সব মিলিয়ে দারুন অগ্নিবর্ষণ। এ বিশ্বে। এ মুর্হুতে।
থার্মোমিটার দিয়ে উষ্ণতা মাপা শুরু হয় ১৮৫০ সাল নাগাদ। তখন থেকেই পৃথিবীর তাপমাত্রার সঠিক পরিমাপ পাওয়া যায়। ১৮৫০-৯০ সালের মধ্যে সময়ের তাপমাত্রাকে ধরা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে উষাকাল। শিল্পায়নের আগের সময়ের তুলনায় পরবর্তী পৃথিবীর তাপ সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায় যে লক্ষ্য ধরা হয় তা হচ্ছে পৃথিবীর তাপমান যেন এই শিল্পায়নের যুগের তুলনায় খুব বেশি হলে দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী থাকে। তার বেশী একদম নয়। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ১৮৫০-৯০ সালের ২.০৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেশী ছিল। আর প্রথম খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৮৯০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ২০২৩ ছিল প্রায় ২.২ ডিগ্রী বেশী। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের প্রায় দশ হাজার গাছের রিং থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করেছেন।
শঙ্কার তো বটেই, এরই মধ্যে সারা বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গলে আগুন জ্বলছে। তাতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রোগ জ্বালা পাল্টাচ্ছে। জলস্তর উঠে আসছে। মনুর কাল সমাগত বলে যজ্ঞ-শান্তিতে তো এর মীমাংসা হবে না। কয়লা পোড়ানো, গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের এগোতে হবে। না হলে সামনের দিন সত্যিই সুখের নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − twelve =