রোগীর পথ্য দুধ, কিন্তু তা রোগীর কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে। এর মধ্যে সকলের আগে যে ওষুধের কথা বলতে হয় তা হল অ্যান্টিবায়োটিক। শরীর অ্যান্টিবায়োটিক শোষণ করলে যখন তা রক্তে মেশে তখন এর কার্যকারিতা দেখা যায়। কিন্তু কোনো কোনো দুগ্ধজাত পণ্যের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তা ঠিকভাবে শরীর শোষণ করতে পারেনা। যেমন ডেমেক্লোসাইক্লিন, নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসনালীর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু জলের বদলে দুধের সাথে গ্রহণ করলে বা এই ওষুধের সাথে দুগ্ধজাত পণ্য খেলে এর কার্যকারিতা ৮৩% কমে যায়। একইভাবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামে অ্যান্টিবায়োটিক নিউমোনিয়া সংক্রমণ কমায়। কিন্তু দেখা গেছে জলের বদলে দুধের সাথে এটা খেলে রক্তে এই ওষুধের পরিমাণ ৩০-৩৬% কম থাকে। দুগ্ধজাত পণ্যও রক্তে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা কমায়, এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা না থাকলেও বলা যায়, এক গ্লাস দুধ কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রার কার্যকারিতা বেশি হ্রাস করায়। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটে?
দুগ্ধজাত পণ্যে প্রভূত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়ন উপস্থিত থাকে। অন্ত্রের তরলে যদি ওষুধ দ্রবীভূত না হয় তাহলে রক্তে তা শোষিত হতে পারেনা। অন্ত্রের মধ্যে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়ন অ্যান্টিবায়োটিক অণুর সাথে বিক্রিয়া করতে শুরু করে। আর এই কারণেই রক্তে অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমাণ কমে যায়। মূলত দুধরনের গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রিয়া করে, টেট্রাসাইক্লিন আর ফ্লুরোকুইনোলোন। এই বিষয়ে পরিত্রাণের উপায় হল, জল দিয়ে ওষুধ খাওয়া। আর দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়ার অন্তত দুঘণ্টা আগে ওষুধ খাওয়া বা এই ধরনের খাবারের অন্তত ছঘন্টা পরে ওষুধ খাওয়া। খেয়াল রাখতে হবে অ্যান্টাসিড ও ডায়েটারি সম্পূরকেও ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, সেক্ষেত্রেও ওষুধ খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ফার্মাকোলজি-তে বলা হয়েছে, প্রস্টেট ক্যানসারের ওষুধ এস্ট্রামিউস্টাইন দুধের সাথে খেলে, ক্যালসিয়ামের একটা জটিল যৌগ তৈরি হয়। এতে শরীর ওষুধ শোষণ করতে পারেনা। অ্যাক্টা ফার্মাকোলজিকা এট টক্সিকোলজিকা-তে বলা হয়েছে, অনিয়মিত হার্টিবিট নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সোটালল, ক্যালসিয়ামের সাথে বন্ড তৈরি করে, ফলে কার্যকারিতা হারায়। অনেক সময় দুধের প্রোটিন কেজিন, কিছু ওষুধের সাথে যৌগ তৈরি করে ফেলে। দুধে থাকা এনজাইম জান্থিন অক্সিডেজ ক্যানসারের ওষুধ মার্কাপ্টোপিউরিন-কে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তাই ওষুধ খাওয়ার সময় ও কীভাবে তা খেতে হবে তা অনুসরণ করা জরুরি।