দুধ খান সানন্দে

দুধ খান সানন্দে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুন, ২০২৫

অন্ত্রের বাস্তুতন্ত্রে কোটি কোটি অণুজীব রয়েছে। খাবার হজম করা, রোগ থেকে বাঁচানো, এমনকি আমাদের মনের উপরও প্রভাব ফেলে এই অণুজীব সমষ্টি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় ৪০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের অন্ত্রজৈবিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হযয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত গরুর দুধ বা দুধজাত খাবার খেলে আমাদের অন্ত্রে উপকারী জীবাণুরা বেশি সক্রিয় ও বৈচিত্র্যময় থাকে। আর এই বৈচিত্র্যই আমাদের শরীরকে রাখে তরতাজা এবং রোগমুক্ত। দুধ খেলে পেটে এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়- ফ্যাক্যালিব্যাকটেরিয়াম। এগুলি পেটের প্রদাহ কমায়, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আরেক উপকারী অণুজীব হল আক্কারম্যানসিয়া। এটি শরীরের ওজন ঠিক রাখতে আর রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বেশি দুধ খেলে এই ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে আরও বেড়ে যায়।অন্যদিকে পনির খাওয়ার পর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া যেমন ব্যাকটেরয়েডস, সাবডোলিগ্রানুলাম কমে যেতে পারে। আবার এগুলি বেশি হয়ে গেলেও অন্ত্রের জৈবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই মাঝে মাঝে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে পনির খাওয়া ভালো। এছাড়া আছে বিফিডোব্যাকটেরিয়াম, যাকে প্রোবায়োটিক বা উপকারি অণুজীবদের প্রধান বলা চলে। খাবার হজমে সাহায্য করা, শরীরকে রোগমুক্ত রাখা এর কাজ। গবেষক ড. হাইফেং ঝাং স্পষ্টভাবে বলেন, “ দুধ এবং দইয়ের ভূমিকা শুধু পুষ্টিতে সীমাবদ্ধ নয়। এরা অন্ত্রে এমন একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে, যেখানে ভালো ব্যাকটেরিয়া বিকশিত হয় এবং রোগ-জীবাণুরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।” তবে সব দুধজাত দ্রব্য উপকারি নয়। প্রক্রিয়াজাত, অতিরিক্ত লবণ বা চিনি মেশানো দুধজাত খাবার অন্ত্রের অণুজীবসমূহের ক্ষতিই ডেকে আনে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম দিক হল ‘অন্ত্র-মস্তিষ্ক অক্ষ’। অর্থাৎ অন্ত্রের স্বাস্থ্য মস্তিষ্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে বলে ধরা হয়। মানে আমরা কি ভাবছি, কেমন ঘুমাচ্ছি, কতটা চাপ নিচ্ছি সবকিছুর পেছনে থাকতে পারে অন্ত্রের ভালো কিংবা মন্দ থাকা। বিজ্ঞান বলছে, ভবিষ্যতের সুস্থতা নির্ভর করছে পেটের ভিতরকার এই ক্ষুদ্র জীবের রাজনীতির উপর। তাই পেট ভালো রাখতে দুধ খান সানন্দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 6 =