
নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার কিউ আই এম আর বার্গহোফার এবং ফ্লিন্ডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল ভিনিগারের (অ্যাসিটিক অ্যাসিড) ব্যাকটেরিয়ারোধী ক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে তোলার এক নতুন নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এই গবেষণাটি এ সি এস ন্যানো জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন কীভাবে সাধারণ ভিনিগারকে ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা যায় – বিশেষত সেইসব “সুপারবাগ” বা ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণু, যাদের দমন করা অত্যন্ত কঠিন, বলা যেতে পারে একপ্রকার অসম্ভব।
ভিনিগারের রাসায়নিক নাম অ্যাসিটিক অ্যাসিড। এটি বহু শতাব্দী ধরে জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে মারতে সক্ষম, কিন্তু অনেক বিপজ্জনক ও অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। গবেষকরা তাই সিদ্ধান্ত নেন ভিনিগারের ক্ষমতাকে আগের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলা যাতে এটি অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
তাঁরা ভিনিগারকে কার্বন ও কোবাল্ট-ভিত্তিক ন্যানোপার্টিকেল -এর সঙ্গে মিশিয়ে এক নতুন ধরনের জীবাণুনাশক তৈরি করেন। পরীক্ষাগারে এই মিশ্রণটি বিভিন্ন বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া যেমন- স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, এসচেরিচিয়া কোলাই (ই. কোলাই) এবং এন্টারোকক্কাস ফেক্যালিস – এর উপর পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল অবিশ্বাস্য। দুর্বল অ্যাসিটিক অ্যাসিডের সঙ্গে এই ন্যানোপার্টিকেলের মিশ্রণ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
গবেষক ড. অ্যাডাম ট্রুস্কেভিচ জানান, ভিনিগারের আম্লিক পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার কোষকে ফুলিয়ে দেয়, ফলে ন্যানোপার্টিকেলগুলো সহজে ভেতরে প্রবেশ করে এবং কোষের ভিতর ও বাইরের উভয় দিক থেকেই আক্রমণ চালায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ফেটে যায় এবং জীবাণুটি মারা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানবকোষের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ । ইঁদুরের ক্ষতস্থানে পরীক্ষার সময় দেখা যায়, এটি সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে দূর করতে সক্ষম, অথচ ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখে।
এই গবেষণার ফলাফল জীবাণুনাশক ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সংগ্রামে নতুন আশা জাগিয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৪.৫ থেকে ৫ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমণজনিত কারণে প্রাণ হারান, যার প্রধান কারণ হলো জীবাণুর ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধক্ষমতা।
প্রফেসর নিলস হ্যালবার্গ বলেন, ঐতিহ্যবাহী জীবাণুনাশক ও আধুনিক ন্যানোটেকনোলজির সমন্বয়ই ভবিষ্যতের চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি হতে পারে। এই ধরনের সমন্বিত চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও পরজীবী ধ্বংসে কার্যকর নতুন অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।
সহজ ভাষায়, সাধারণ ভিনিগারের মতো পুরোনো জীবাণুনাশক অস্ত্রকে শান দিয়ে বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন শক্তিশালী ও নিরাপদ জীবাণুনাশকে রূপান্তরিত করেছেন ,যা ভবিষ্যতে ক্ষত সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া এবং প্রাণঘাতী সংক্রমণ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সূত্র: “Cobalt-Doped Carbon Quantum Dots Work Synergistically with Weak Acetic Acid to Eliminate Antimicrobial-Resistant Bacterial Infections” by Adam Truskewycz, Benedict Choi,et.al; (8.09.2025), ACS Nano.
DOI: 10.1021/acsnano.5c03108