দূষণের কালো ধোঁয়া ফুলের পরাগায়নে বাধার সৃষ্টি করছে

দূষণের কালো ধোঁয়া ফুলের পরাগায়নে বাধার সৃষ্টি করছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বাতাসে ক্রমেই বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। বাতাসে ধূলিকণা উড়ে বসবাসকারী মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই দূষণ থেকে ছাড় নেই গাছেদেরও। বিদেশে গবেষকরা দেখেছেন যে বাতাসে নাইট্রেট র‍্যাডিকেল (NO3) একটি সাধারণ বন্য ফুল থেকে নির্গত গন্ধকে হ্রাস করে। ফলে বাধার সৃষ্টি হয় পরাগায়নে। রাতের পরাগায়নকারীরা ফুলের খোঁজ পাওয়ার জন্য নির্ভর করে এমন গন্ধ-ভিত্তিক সংকেতের উপর যা দিনে দিনে মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে, গাড়ি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং অন্যান্য উত্স থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইডের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে উৎপন্ন হয় নাইট্রেটের। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রথম দেখায় রাতেরবেলায় দূষণ কীভাবে পরপর কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় যা ফুলের গন্ধের সংকেতকে হ্রাস করে। রাতেরবেলায় পতঙ্গরা আর গন্ধের মাধ্যমে ফুলগুলো শনাক্ত করতে পারে না ফলে সারা বিশ্বেই দূষণের প্রভাব পরছে পরাগায়নের উপর। ওনোথেরা পল্লীদা নামের এই বন্যফুলটি পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শুষ্ক পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এই সাদা ফুলগুলো থেকে একটি সুগন্ধ নির্গত হয় যা নিশাচর মথ সহ বিভিন্ন পরাগায়নকারীদের আকর্ষণ করে। ফুলের এই গন্ধ বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয়।
গবেষকরা প্রথমে বন্য ফুলের গন্ধ সৃষ্টিকারী ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক শনাক্ত করেন। তারপর গন্ধের মধ্যে থাকা প্রতিটি রাসায়নিক কীভাবে NO3-এর সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটায় তা পর্যবেক্ষণ করতে ‘মাস স্পেকট্রোমেট্রি’ নামে একটি আরও উন্নত কৌশল ব্যবহার করেন। তারা দেখেন যে NO3-এর সাথে বিক্রিয়া করে কিছু নির্দিষ্ট সুগন্ধি রাসায়নিক যেমন মোনোটারপেন প্রায় নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। মথ জাতীয় পতঙ্গ তাদের অ্যান্টেনার মাধ্যমে গন্ধ পায় আর তাদের এই গন্ধ-শনাক্ত করার ক্ষমতা প্রায় কুকুরের সমতুল্য – এবং মানুষের গন্ধের অনুভূতির চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি সংবেদনশীল। বেশ কয়েকটি প্রজাতির মথ কিছু মাইল দূরে থেকে গন্ধ শনাক্ত করতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু নকল ফুল রেখে গবেষকরা দেখেন যে পতঙ্গরা যেমন আসল ফুলের দিকে উড়ে যাচ্ছে ঠিক একইরকমভাবে একই সুগন্ধি ব্যবহৃত কিছু নকল ফুলের উপরেও গিয়ে বসছে। কিন্তু, NO3 ব্যবহারের ফলে ফুলের সুগন্ধি কমে গেলে মথেরা সেই ফুলের দিকে আর উড়ে যাচ্ছে না, তা প্রায় ৭০% হ্রাস পেয়েছে। দলটি দিনের বেলা এবং রাতের দূষণের পরিস্থিতি কীভাবে বন্য ফুলের গন্ধের রাসায়নিককে প্রভাবিত করে তা তুলনা করেছেন। তারা দেখেন দিনের দূষণের চেয়ে রাতের দূষণ গন্ধের রাসায়নিকের উপর বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাদের মতে এটি মূলত সূর্যালোকের কারণে ঘটে। মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তা ফুলের সুগন্ধির রাসায়নিক সংমিশ্রণকে পরিবর্তন করছে। এমন পরিমাণে এই পরিবর্তন ঘটছে যে পরাগায়নকারীরা ফুলের গন্ধ আর চিনতে পারছে না, ফুলও আর চিহ্নিত করতে পারছে না। ২৪০,০০০-এরও বেশি প্রজাতির ফুল গাছের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পরাগায়নকারীদের উপর নির্ভর করে এবং ৭০টিরও বেশি প্রজাতির পরাগায়নকারী আজ বিপন্ন বা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 5 =