দৈব যোগাযোগের মাধ্যম গুহাশিশু

দৈব যোগাযোগের মাধ্যম গুহাশিশু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ এপ্রিল, ২০২৫

প্রাচীন গুহাচিত্রে শিশুদের উপস্থিতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। এগুলি দেখলে প্রশ্ন জাগতেই পারে, প্রাচীন মানুষেরা তাদের ছোট ছোট শিশুদের গুহার একেবারে গভীরে বিপজ্জনক অন্ধকার সুড়ঙ্গপথের মধ্যে কোথায় নিয়ে যেত? কেনই বা নিয়ে যেত? টেল আবিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ছোট শিশুরা মানুষ ও অদৃশ্য জগতের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করত- তারা ছিল ‘আধ্যাত্মিকতার মাধ্যম’। ফ্রান্সের গুহাচিত্র ৪০,০০০ বছর পুরানো এবং স্পেনের চিত্রগুলি, ১২,০০০ বছর। এগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এক রহস্য। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলি প্রাপ্তবয়স্ক চিত্রকরদের কেন্দ্র করে পরিচালিত হলেও এখন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, শিশুরাও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিত। দুই বছর বয়সী শিশুদের হাত ও পায়ের ছাপ চিত্রগুলির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রাচীন চিহ্নগুলি থেকে দেখা যায়, শিশুরা কেবল যে সেখানে উপস্থিত থাকত তাই নয়, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করতো। গবেষক আসাফ বলেন, “গুহাশিল্পে শিশুদের আধ্যাত্মিক অংশগ্রহণের শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে”। এটাই প্রশ্ন তোলে: কেন খুব ছোট শিশুদের বিপজ্জনক গুহায় নিয়ে যাওয়া হত? এতদিন প্রায় সকলেই ধরে নিতেন, এর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষামূলক। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এর অন্তরালে আরো কিছু রহস্য রয়েছে। গবেষক কেদার বলেন, “গুহা শিল্পের ওপর ব্যাপক গবেষণা সত্ত্বেও, শিশুদের উপস্থিতি নিয়ে খুব কম গবেষণা করা হয়েছে।” গুহার মানুষের আচার-ক্রিয়ার প্রকৃতি নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ছোট শিশুরা শক্তিশালী আধ্যাত্মিক মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হত। অনেক কৃষ্টিতে শিশুদের কেবল প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার কাজে ‘শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে গণ্য করা হত। আসাফ বলেন, “শিশুদের অনন্য মানসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই স্থানীয় কৃষ্টিগুলি তাদের ‘সক্রিয় দূত’ হিসেবে দেখত।” প্রাচীন সম্প্রদায়গুলি বিশ্বাস করত যে শিশুদের মাধ্যমে তারা আধ্যাত্মিক সত্তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। প্রাগৈতিহাসিক সমাজগুলির কাছে গুহায় নামাটা শুধু শারীরিক নয়, বরং মানসিক শক্তির প্রতীক ছিল। ছোট শিশুদের দুই পারের ‘সীমান্তিক সত্তা’ হিসেবে দেখা হত। অ-মানব সত্তার কাছে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তারাই যেন বিশেষভাবে উপযুক্ত । এইভাবেই শিশুদের উপস্থিতি আচার-ক্রিয়ার শক্তি বাড়াতে সাহায্য করত। অতএব, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে শিশুদের গুহার গভীরে যাত্রা করতে দেখা স্বাভাবিক ! শিশুরা আঁকিবুঁকি কাটা ও আচারক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করত। এই গবেষণা প্রাচীন সমাজে শিশুদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করছে। গবেষকরা তাদের কেবল দর্শক হিসেবে নয়, বরং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ও কৃষ্টি সংক্রান্ত গবেষণাকে একত্রিত করে, বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন প্রাচীন মানবরা শিশুদের আধ্যাত্মিক সংযোগের মাধ্যম হিসেবে চিত্রিত করত। গবেষণাটি এমডিপিআইয়ের ‘আর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =