
প্রকৃতির ধীর লয়ের বিবর্তনকে ছাপিয়ে, অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এখন ল্যাবের টেস্ট টিউবেই সৃষ্টি করছেন দ্রুতগতির জৈবিক বিপ্লব। তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির নাম প্রোটিয়াস (Proteus, Protein Evolution Using Selection ) – অর্থাৎ বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের বিবর্তন। কৃত্রিম জৈবিক বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, এই পদ্ধতি স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষের অণুকে বিবর্তিত করে আগের চেয়ে বহুগুণ কার্যকর করে তুলছে। প্রোটিয়াস-এর মূল চালিকা শক্তি প্রত্যক্ষ বিবর্তন। এতে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে অনুকরণ করা হয় বহুগুণ দ্রুততার সঙ্গে। নির্দেশিত বিবর্তন এবং কৃত্রিম জৈবিক বুদ্ধিমত্তা (ABI) দুটি ভিন্ন পদ্ধতি যা প্রায়ই সমন্বিতভাবে জীববৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারা অনুকরণ করে নির্দেশিত বিবর্তন, নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন বা নিউক্লেইক অ্যাসিড তৈরি করে। আর ABI বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা কৃ বু নির্ভর কৌশল। এই নির্দেশিত বিবর্তন সম্ভাবনাময় ভ্যারিয়েন্ট (রূপভেদ)-এর পূর্বাভাস ও বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত ও উন্নত করে। যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রকৃতিতে হয়ত শত বছর লাগবে, প্রোটিয়াস সেটি করে ফেলছে মাত্র কয়েক সপ্তাহেই। পূর্বে এই প্রযুক্তি কেবল ব্যাকটেরিয়া কিংবা ইস্ট কোষে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তা সরাসরি স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষে প্রযুক্ত হচ্ছে, প্রায় মানবদেহেরই মতন পরিবেশে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গ্রেগ নিলি এবং চোং কার্যকর জিনোমিক্স গবেষণাগার-এর প্রধান ড. জন এবং অ্যান, এক কথায় বললেন, “আমরা এমন অণু বানাতে পারি, যা আমাদের শরীরে নিখুঁতভাবে কাজ করবে। কিছু ওষুধ, যা এখন তৈরি করা অসম্ভব মনে হয়, সেগুলোও পেয়ে যাব।” গবেষকরা প্রোটিয়াস-এর সামনে ফেলেন জটিল জৈব-চ্যালেঞ্জ। যেমন, কোনো ক্ষতিকর জিনের কাজ থামিয়ে দেওয়া। ঠিক কৃ বু মডেলেরই মতো, প্রোটিয়াস লাখো সম্ভাবনা যাচাই করে খুঁজে বের করে এমন অণু, যা প্রকৃতিতে আগে ছিল না। কিন্তু পথে আছে এক অদ্ভূত চালাকি যা অনেকসময়ই সহায়ক নয়। সেটা কি? কোষ সহজ সমাধান বেছে নেয়, তবে মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এই প্রবণতা ঠেকাতে তৈরি করেন দুই ভিন্ন ভাইরাসের উপাদান মিশিয়ে বানানো কণা, যা বিবর্তন প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল রাখে। এই পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে এমন প্রোটিন, যা ওষুধের প্রতি আরও সংবেদনশীল। তৈরি হয়েছে নতুন জিন-নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম, এমনকি ক্ষুদ্র অ্যান্টিবডি, যা ডি এন এর ক্ষতি শনাক্ত করতে পারে। ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায় শনাক্তকরণে এ আবিষ্কার হতে পারে একেবারে নতুন পথের দিশারী। প্রোটিয়াস-এর ক্ষমতা প্রচুর – জিন এডিটিং প্রযুক্তিকে উন্নত করা, mRNA ওষুধকে আরও শক্তিশালী ও নির্ভুল করা, এমনকি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের উৎসেচক ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা। সবচেয়ে বড় কথা, এ এক উন্মুক্ত মঞ্চ। বিশ্বের যেকোনো গবেষণাগার বিনামূল্যে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে পারবে। ২০১৮ সালে ‘নির্দেশিত বিবর্তন’-এর ধারণার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল এই প্রযুক্তিকে। প্রোটিয়াস সেই উত্তরাধিকারকে মানবকোষের ভেতরে এনে, চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সম্ভাবনাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিতে চলেছে। সে যেন প্রমাণ করছে, বিবর্তন শুধু প্রকৃতির বিলম্বিত সুরের গাথা নয়, বিজ্ঞানীর হাতে তা হতে পারে এক দ্রুতলয় সিম্ফনি। ক্যান্সার চিকিৎসা, জিনগত রোগ নিরাময়, এমনকি নতুন ভ্যাকসিন তৈরির কাহিনীতে হয়তো শীঘ্রই প্রোটিয়াস-ই হবে নেপথ্যের নায়ক।
সূত্র : A chimeric viral platform for directed evolution in mammalian cells by Alexander J. Cole, et.al ; Nature Communications (May 7 , 2025)
[19/08, 6:32 pm] Dr Sibesh Bera (Molecular Biophysicist): Ms Suparna-র Proteus নিয়ে লেখাটা কিন্তু ছোটোর ওপর বেশ চমৎকার হয়েছে।
স্বচ্ছ লেখা। এটা পড়ে ভাল লাগল এই ভেবে যে বিজ্ঞান কে সঠিক কাজে লাগাতে পারলে কি হতে পারে। আবার পুঁজির স্বার্থ ঢুকে গেলে সব কুক্ষিগত হয়ে যায়।