ধাতুর নিজস্ব মেরামত পদ্ধতি- হতবাক বিজ্ঞানীরা

ধাতুর নিজস্ব মেরামত পদ্ধতি- হতবাক বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জুলাই, ২০২৩

নিজে থেকেই ধাতুর নিরাময় প্রক্রিয়া সাধিত হচ্ছে- এমনটাই দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে কখনো এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের চোখে পড়েনি। যদি এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিঙের নতুন যুগের সূচনা হবে। স্যান্ডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ এবং টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির গবেষকের দল একটি ধাতুর স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করার সময় ধাতুটির প্রান্ত প্রতি সেকেন্ডে ২০০ বার টানার জন্য একটি বিশেষ ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তারা দেখেন যে বায়ু শূন্য স্থানে বা ভ্যাকিউমে ঝোলানো প্ল্যাটিনামের ৪০-ন্যানোমিটার-পুরু টুকরোতে অতি-ছোটো স্কেলে স্ব-নিরাময় ঘটছে।
এই ধরনের স্ট্রেন বা টানের কারণে সৃষ্ট ফাটল- ‘ফ্যাটিগ ড্যামেজ’ নামে পরিচিত। ধাতুতে বারংবার চাপ দেওয়া ও তার ফলে টানের কারণে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ফাটল ধরে এবং পরে কাঠামোটি ভেঙে পড়ে। আশ্চর্যজনকভাবে, প্রায় ৪০ মিনিট পর থেকে প্ল্যাটিনামের ফাটল নিজে থেকেই মেরামত হতে শুরু করে, যদিও ইতিমধ্যে আবার অন্য দিকে ফাটল দেখা যায়। স্যান্ডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজের পদার্থ বিজ্ঞানী ব্র্যাড বয়েসের মতে ঘটনাটা খুবই আশ্চর্যজনক আর এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে ন্যানোস্কেলে ফ্যাটিগ ড্যামেজ হলে ধাতুর নিজস্ব অন্তর্নিহিত, স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে তা নিরাময় করার। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এর কারণ হল কোল্ড ওয়েল্ডিং নামে পরিচিত এক প্রক্রিয়া, যা পরিবেষ্টিত তাপমাত্রায় ঘটে। এই সময় যখন দুটি ধাতু খুব কাছাকাছি আসে তখন ধাতব পৃষ্ঠের নিজ নিজ পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে যায়। এই অপ্রত্যাশিত আচরণের কারণ হল যখন সংস্পর্শে থাকা পরমাণু একই ধরণের হয়, তখন পরমাণুগুলো একে ওপরের সাথে জুড়ে যায়, তারা বুঝতে পারে না যে তারা আলাদা দুটো টুকরোর। সাধারণত, বাতাসের পাতলা স্তর বা দূষকের কারণে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে।
টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির মেটেরিয়াল সায়েন্টিস্ট মাইকেল ডেমকোভিজের মতে ঘটনাটি আগে না ঘটলেও এটা অপ্রত্যাশিত নয় কারণ ২০১৩ সালে, একটি গবেষণায় কাজ করার সময় তিনি দেখেন যে এই ধরনের ন্যানোক্র্যাকের নিরাময় ঘটতে পারে, যা ধাতুর অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র স্ফটিক কণার মতো জিনিস দ্বারা চালিত। মূলত চাপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এই কণাগুলো তাদের স্থান পরিবর্তন করে। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় স্বয়ংক্রিয় মেরামত প্রক্রিয়াটি গবেষণার আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল দিক। সাধারণত ধাতুর গঠন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ তাপ প্রয়োজন, কিন্তু উক্ত পরীক্ষাটি সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য স্থানে করা হয়। গবেষকরা এখন দেখতে চান সাধারণ পরিবেশে অন্যান্য প্রচলিত ধাতুতে একই প্রক্রিয়া ঘটবে কিনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =