নখহীন বিড়ালের যন্ত্রণা

নখহীন বিড়ালের যন্ত্রণা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অনেক পোষ্য বিড়ালের মালিকই বিড়ালের নখ উপড়ে ফেলাকে একটি নিরাপদ সমাধান মনে করেন। এটি তাদের আঁচড় থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায়। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, এই অস্ত্রোপচার আসলে একটি অঙ্গচ্ছেদ, যা স্থায়ী শারীরবৃত্তীয় ও স্নায়বিক ক্ষতি ঘটায়। কানাডার কুইবেকের মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল সম্প্রতি দেখিয়েছেন, নখ তোলা বিড়ালেরা দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুজনিত আঘাত ও ব্যথাজনিত জটিলতায় ভোগে। গবেষণা পরিচালক এরিক ট্রঁসি বলেন, “নখহীন বিড়ালের যন্ত্রণা বরাবরই অবহেলিত হয়েছে। আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, এটি শুধু নৈতিক সমস্যা নয়, বড় রকমের ক্ষতিও বটে।” এই গবেষণার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষকদলের কাছে প্রাকৃতিকভাবে অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত বিড়াল ছিল। ফলে তারা দুটি ব্যথার উৎস আলাদা করতে সাহায্য করেছে- ক. গাঁটের বার্ধক্যজনিত ব্যথা, খ. নখ তোলার কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত যন্ত্রণা। তারা হাঁটার ধরণ বিশ্লেষণ করে চলাফেরার অসুবিধা শনাক্ত করেন, সাথে বিড়ালগুলির মস্তিষ্কে ব্যথার প্রভাব পরিমাপ করেন। এছাড়া স্নায়ু সংকেতের গতি ও তীব্রতাও পরীক্ষা করে দেখেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, নখ তোলা বিড়ালের স্নায়ুতে স্নায়ু তন্তুর ক্ষতি ঘটে। তাদের ব্যথার সংবেদনশীলতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরা তুলনামূলকভাবে সুস্থ। তবে অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত বিড়ালের চেয়েও এদের হাঁটাচলা করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ভারী বিড়ালের ক্ষেত্রে, এ সমস্যা আরও তীব্র, যা সার্জারি ও শরীরের ওজনের সম্মিলিত প্রভাব নির্দেশ করে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, নখহীন বিড়ালরা, প্রায়ই লাফ দিতে অনীহা প্রকাশ করে, লিটারবক্স এড়িয়ে চলে পায়ের যন্ত্রণার কারণে, অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক আচরণ করে থাকে। এই আচরণগুলো স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী পরিবর্তনের নিদর্শন, যা ব্যথাকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলার বিশেষ প্রমাণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯২ সালেই এই অস্ত্রোপচার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অনেক জায়গায় এখনও এটি বহুল প্রচলিত। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তর আমেরিকায় প্রায় ২৫ মিলিয়ন বিড়ালের নখ তোলা হবে। যদিও কানাডার কুইবেক প্রদেশ ২০২৪ সালে প্রাদেশিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ২০২২ সালে নখ তোলার ফলাফল নিয়ে জানায়, “প্রমাণ পরস্পরবিরোধী।” কুইবেক গবেষকরা এটিকে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার ঘাটতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, বৈপরীত্য হিসেবে নয়। ট্রঁসির ভাষায়, “এটি কখনই নিয়মিত শল্যচিকিৎসা নয়। এটি প্রাণীর জন্য কষ্টকর একটি অঙ্গচ্ছেদ মাত্র।” গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, নখ তোলার বিকল্প বহু আছে। নিয়মিত নখ কাটা, কিংবা আচরণগত প্রশিক্ষণ। এমনকি অন্য অস্ত্রোপচার যেমন স্নায়ু ও পেশীর মধ্যে সংযোগকারী শক্ত তন্তুযুক্ত কলা কেটে দেওয়া । তাও এটি সমানভাবে ব্যথা ও অস্বাভাবিকতা তৈরি করে, তাই এই পদ্ধতি এড়ানোই উচিত।

সূত্র : Declawing in Cat is associated with neuroplastic sensitization and long-term painful afflictions; Scientific Reports (Published: 17 August 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − ten =