নতুন ক্ষুদে ডাইনোসর

নতুন ক্ষুদে ডাইনোসর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জুলাই, ২০২৫

জীবাশ্মবিদরা সম্প্রতি উত্তর আমেরিকার মরিসন ফর্মেশন অঞ্চল থেকে নতুন এক ছোট আকৃতির ডাইনোসরের প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন।গবেষণাটি রয়্যাল সোসাইটি ওপেন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। একদা উত্তর আমেরিকার প্রাচীন নদীতীর ধরে দৌড়ে বেড়ানো এই ছোট ডাইনোসরের জীবাশ্ম এখন লন্ডনে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে। নব আবিষ্কৃত এই প্রজাতিটির নাম হল এনিগমাকার্সর মলিবোর্থউইকা । এটি এ ধরনের ডাইনোসরের মধ্যে সবচেয়ে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম নমুনা হিসেবে বিবেচিত। এই প্রজাতির নিদর্শন বর্তমানে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে স্থায়ীভাবে দেখা যাবে। এনিগমাকার্সর –এর এই আবিষ্কার এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা একটি শ্রেণিবিন্যাসগত ধাঁধার সমাধান এনেছে। এদের উৎপত্তি আনুমানিক ১৫২ থেকে ১৪৫ মিলিয়ন বছর আগে জুরাসিক যুগের শেষ পর্যায়ে।

মরিসন ফর্মেশন অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে বৃহৎ আকৃতির ডাইনোসর যেমন অ্যালোসরাস এবং স্টেগোসরাস এর জন্য পরিচিত হলেও, ছোট আকৃতির তৃণভোজী ডাইনোসররা বরাবরই অবহেলিত ছিল। এনিগমাকার্সর সেই অবহেলিত শ্রেণির এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। এরা ছিল একটি দ্রুতগামী, লম্বা পা-ওয়ালা ডাইনোসর, যারা দ্রুত গতিতে শিকারীদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচত। এদের নামের অর্থই হল “রহস্যময় দৌড়বাজ ”।
প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জীবাশ্মটির অনেক কশেরুকা এখনও পুরোপুরি সংযুক্ত হয়নি। এর দ্বারা প্রমাণিত এটি এখনও পূর্ণবয়স্ক হয়নি। তবে, এটি কীভাবে মারা গিয়েছিল তা অস্পষ্ট, কারণ হাড়ে কোনো আঘাত বা রোগের চিহ্ন মেলেনি।
২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত জমিতে নতুন জীবাশ্মগুলি আবিষ্কার হয়েছিল। এটিকে বাণিজ্যিক জীবাশ্ম হিসেবে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এই জীবাশ্মগুলোকে ন্যানোসরাস বলেই ধারণা করা হত। পরবর্তীকালে বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা যায় পূর্ববর্তী শ্রেণিবিন্যাসটি ভুল ছিল। ১৮৭৭ সালে নামকরণ হওয়া ন্যানোসরাস মূলত অস্পষ্ট ও অপর্যাপ্ত হাড়ের ছাপের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল। বর্তমান বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি, যা এনিগমাকার্সর নামে স্বীকৃতি পায়। ন্যানোসরাসকে এখন আর প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা না হলেও এর কিছু জীবাশ্মের বৈজ্ঞানিক মূল্য রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক জীবাশ্মে যে কটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় যে তারা এনিগমাকার্সর থেকে আলাদা। হয়তো মরিসন থেকে আরও ছোট ডাইনোসর প্রজাতি আবিষ্কার করা যেতে পারে।

গবেষকদের আশা, এই আবিষ্কার অন্যান্য অনামি ছোট ডাইনোসরের অনুসন্ধানে উৎসাহ দেবে। বহু অজ্ঞাত জীবাশ্ম ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে। সেগুলোর সঠিক পরিচয় এখনও অজানা।
তাঁরা বলেন, এই শ্রেণিবিন্যাসমূলক গবেষণার কাজটি যেন বন্ধ না হয়। তা নিশ্চিত করার জন্য আরও তহবিল এবং সহায়তা দরকার, যাতে পৃথিবীতে কোন জীবন কীভাবে বিকশিত হয়েছিল তা আমরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − ten =