১৯৭২ সালে একজন গর্ভবতী মহিলার রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। সে সময় ডাক্তাররা আবিষ্কার করেছিলেন সেই মহিলার লোহিত রক্তকণিকায় তার পৃষ্ঠের অণু রহস্যজনকভাবে অনুপস্থিত ছিল। আজ ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর অণুর এই রহস্যজনক অনুপস্থিতির সমস্যা সমাধান করেন ইউরোপ এবং ইস্রায়েলের গবেষকরা। তারা মানুষের মধ্যে একটি নতুন রক্তের গ্রুপ সিস্টেম বর্ণনা করেছেন। ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের হেমাটোলজিস্ট লুইস টিলের মতে এটি একটি বিশাল কৃতিত্বের বিষয় যে অবশেষে এই নতুন রক্তের গ্রুপ সিস্টেমটি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ফলে বিরল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা প্রদান করা যাবে। যদিও আমরা ABO ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম এবং রিসাস ফ্যাক্টরের সাথে বেশি পরিচিত, তবে প্রকৃতপক্ষে মানুষের রক্ত কোশের বিভিন্ন ধরণের কোশ-পৃষ্ঠের প্রোটিন এবং শর্করার আবরণের উপর ভিত্তি করে অনেক ভিন্ন ভিন্ন রক্তের গ্রুপ সিস্টেম রয়েছে।
আমাদের দেহের এই অ্যান্টিজেন অণুগুলো তাদের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আইডেন্টিফিকেশন মার্কার হিসেবে কাজ করে, নিজেদের থেকে আলাদা উপাদানগুলো চিহ্নিত করে। রক্তদানের সময় দাতা ও গ্রহীতার রক্ত তাই মিলিয়ে দেখতে হয়। না হলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বেশিরভাগ রক্তের গ্রুপগুলো চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০২২ সালে গবেষকরা প্রথম Er ব্লাড সিস্টেমের মতো সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন, যা শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক লোকেরই রয়েছে। নতুন এই রক্তের গ্রুপের ক্ষেত্রেও একই কথা বলছেন গবেষকরা। ঘটনাটা বিরল কারণ এই ধরনের জিনগত পরিব্যপ্তি খুব একটা দেখা যায় না। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে ৯৯.৯%-এরও বেশি লোকের AnWj অ্যান্টিজেন রয়েছে। কিন্তু এই অ্যান্টিজেন ১৯৭২ –এর ওই মহিলার রক্তে অনুপস্থিত ছিল। এই অ্যান্টিজেন একটি মাইলিন অ্যান্ড লিম্ফোসাইট প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল, গবেষকরা তাই এই নতুন বর্ণিত সিস্টেমটিকে MAL রক্তের গ্রুপ নামে নামাঙ্কিত করেন। যখন কারও শরীরে এমএএল জিনের মিউটেটেড সংস্করণের উভয় কপি থাকে, তখন তার AnWj- নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ হয়। ওই গর্ভবতী মহিলার রক্তের গ্রুপও এটি ছিল। গবেষকরা অবশ্য এই বিরল রক্তের গ্রুপের তিনজন রোগীকে শনাক্ত করেছেন যাদের এই মিউটেশন ছিল না। ফলত এটি স্পষ্ট যে কখনও কখনও রক্তের কোন রোগও অ্যান্টিজেনকে রোধ করতে পারে। এই বিরল রক্তের ব্যাধি রোগীদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই যত তাড়াতাড়ি আমরা এদের শনাক্ত করতে পারি তত বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।